সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব না দিয়েই চলে গেলেন শিক্ষামন্ত্রী

প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন শিক্ষামন্ত্রীবিভিন্ন গণমাধ্যমে খণ্ডিতভাবে বক্তব্য প্রকাশ হওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘গত ২৪ ডিসেম্বর শিক্ষা ভবনের একটি অনুষ্ঠানের সংবাদ বেশিরভাগ গণমাধ্যমে যথোপযুক্তভাবে তুলে ধরা হলেও কতিপয় পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়ায় আমার বক্তব্য খণ্ডিতভাবে প্রকাশিত হওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। সেই বিভ্রান্তির ওপর ভিত্তি করে কতিপয় বিশিষ্টজন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মতামতও জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’ এই বিষয়টি স্পষ্ট করতেই প্রেস ব্রিফিং আয়োজন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করার পর সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের জবাব না দিয়েই তিনি সম্মেলনকক্ষ ত্যাগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিশিষ্টজনদের কেউ কেউ কতিপয় মিডিয়ায় প্রকাশিত খণ্ডিত-ভিত্তিহীন সংবাদের ওপর ভিত্তি করে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলছেন। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আমার দীর্ঘদিনের সততার সংগ্রাম, নীতি-আদর্শ, কর্তব্যনিষ্ঠা, দায়িত্ববোধের বিষয়ে আপনারা অবগত। মিডিয়ার খণ্ডিত, ভিত্তিহীন সংবাদের ওপর ভিত্তি করে মন্তব্য করার আগে সরাসরি আমাকে প্রশ্ন করলে অনেক বেশি খুশি হতাম।’
শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের শুরুর দিকের কথা তুলে ধরে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম। সেখানে বলেছিলাম- আমাদের সম্পদ কম, যতটুকু সম্পদ আছে, তার সবটুকু সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে হবে। দুর্নীতি-অপচয় ও অপব্যয় বন্ধ করতে হবে। এক টাকা দিয়ে দুই টাকার কাজ করতে হবে। সেই ধারাবাহিকতায় অব্যাহতভাবে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।’
২৪ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যের সূত্র তুলে ধরতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দফতর, সংস্থাগুলোর মধ্যে ভাবমূর্তির দিক দিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে ছিল পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ)। কর্মকর্তারা ঘুষ-দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিলেন। এ সবই আগের বিএনপি-জামায়াত সরকারের অপশাসনের ফসল। সেই সময় ডিআইএ কর্মকর্তারা অসহায় শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা ঘুষের খাম গ্রহণ করার সময় বলত, এর ভাগ ওপরেও দিতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষক-কর্মচারীরা মনে করত, অফিসাররা চোর, মন্ত্রীও চোর।’
মন্ত্রী বলেন, ‘‘সেই সময় তাদের (ডিআইএ কর্মকর্তা) ঘুষ-দুর্নীতি থেকে বিরত রাখার কোনও পরিবেশ ছিল না। অনেক শিক্ষক এসে আমার সামনে কান্নাকাটি করে বলত, ‘আমরা নিম্ন বেতনের চাকরি করি, এত টাকা কোথায় থেকে দেবো?’ ‘ঘুষের মাত্রা একটু সহনীয় হলেও বাঁচতাম’ বলে তারা মন্তব্য করত। ২৪ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় অতীতের ওইসব ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরতে গিয়েই আমি উদ্ধৃতি দিয়েছিলাম, ‘ঘুষের সহনীয় মাত্রা’ এবং ‘অফিসাররা চোর, মন্ত্রী চোর’।’’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময়ে শিক্ষা খাতের অনেক অর্জন যেমন রয়েছে, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন নিশ্চিত করাসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে এখনও চ্যালেঞ্জ আছে। সব ক্ষেত্রে আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে চাই। আপনাদের সবার সহযোগিতা আমি প্রত্যাশা করি।’ এসময় গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখন পর্যন্ত সব অর্জনের আপনারা সমান অংশীদার।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের পরে সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি শিক্ষামন্ত্রী।