বিজ্ঞাপন দিয়ে দায় সারে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ!

 

আপেল নিয়ে ফেসবুক পেজে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পোস্টখাদ্যপণ্য নিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতামূলক পোস্ট দিয়েই নিজেদের দায় সারে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। অথচ খাদ্যপণ্যের গুণগত মান ঠিক আছে কিনা, কোনও অভিযোগ উঠলে, তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য মাঠপর্যায়ে সংস্থাটির কোনও কার্যক্রমই নেই। বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের কেউ কেউ পক্ষ বলছেন, জনবল সংকটের কারণে সম্ভব হচ্ছে না। আবার কেউ বলছেন, মাঠপর্যায়ের কাজ তাদের নয়, কেবল বিজ্ঞাপন দিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করাই তাদের দায়িত্ব।    

উল্লেখ্য, এ বছরের ১২ ডিসেম্বর ফ্রান্সের  ল্যাকটালিস কোম্পানির শিশুর ফরমুলা দুধে সালমোলেনা এগোনা নামক ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়ার খবর প্রকাশিত হয় বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এরপর ১৪ ডিসেম্বর  ‘বেবীমিল্ক ফরমুলা’-সম্পর্কিত সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে খাদ্য কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দেশের বাজারে এ দুধ এখনও বিক্রি হচ্ছে কিনা, তা জানে না সংস্থাটি। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য নিরাপদ কর্তৃপক্ষের পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা শিশুখাদ্যে সালমোলেনা এগোনা নামক ক্ষতিকারক জীবাণু পাওয়ার খবর পাওয়ার পর বিজ্ঞাপন দিয়েছি। পাশাপাশি বাংলাদেশে এই দুধ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে দিয়েছি বিক্রি না করতে। তবে এখনও বাজারে এ দুধ বিক্রি হচ্ছে কিনা, জানা নেই। জনবল সংকটের কারণে মাঠপর্যায়ে খোঁজ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মাত্র ১৬ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানে। তবে ৩৩৭ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। এই জনবল যুক্ত হলে মাঠপর্যায়ে কাজ করা যাবে।’    

ডিম নিয়ে ফেসবুক পেজে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পোস্ট

মোখলেসুর রহমান জনবল সংকটকে গুরুত্ব দিতে চাইলেও খাদ্য নিরাপদ সংস্থাটির সচিব মো. খালেদ হোসেন বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অভিযান পরিচালনা বা মাঠপর্যায়ে কাজ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। বিজ্ঞাপন ও কর্মশালা করে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য।’

গত ১৯ ডিসেম্বর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে বলে, আমরা বার বার নিশ্চিত করে চলেছি, বর্তমানে ফল ও মাছে ফরমালিন দেওয়া হচ্ছে না। ফরমালিনের ওপেন প্রাপ্যতা এখন একেবারেই নেই বললেই চলে। ফরমালিন আইন ও আমদানিনীতি সংশোধন করে তা বন্ধ করা হয়েছে। যারা আপেল পচে না বলে ফরমালিনের উদারণ টেনে ফল খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন, তারা নিজে ও ছেলে-মেয়েদের পুষ্টি থেকে বঞ্চিত করছেন।

শিশুখাদ্য নিয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন বা পোস্ট দেওয়ার আগে নিজেরা পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার বলে মনে করেন নিরাপদ খাদ্য গবেষক দেলওয়ার জাহান। তিনি বলেন, ‘তারা হয়তো বিজ্ঞাপন দিয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছেন। তবে কোনও বিজ্ঞাপন বা পোস্ট দেওয়ার আগে বিস্তারিত পরীক্ষা করার প্রয়োজন আছে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্য দুই ধরনের বিষক্রিয়া হয়ে থাকে। প্রথমত দূষণ, দ্বিতীয়ত ফরমালিনের ভেজাল। আমাদের দেশে ফরমালিন মেশানো খাদ্য নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে তেমন কোনও অভিযানে নেই।’    

বর্তমানে ফলে ফরমালিন দেওয়া হচ্ছে না, বিষয়টি কিভাবে নিশ্চিত হয়েছেন—জানতে চাইলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আপনি সচিবের সঙ্গে কথা বলুন।’ এরপর সচিব মো. খালেদ হোসেন কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনও উত্তর দিতে পারেননি।

বেশকিছু দিন জনগণের মধ্যে নকল বা প্লাস্টিকের ডিম বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর নকল বা প্লাস্টিকের ডিমের প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

ফেসবুক পেজে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পোস্ট

কিসের ভিত্তিতে বাজারে নকল বা প্লাস্টিকের ডিম নেই নিশ্চিত করেছেন জানতে চাইলে পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘যারা ডিম আমদানি-রফতানি ও ডিম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, তারা বলছেন বাজারে এ রকম কোনও ডিমের অস্তিত্ব নেই। এরপর আমরা এ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। তবে এ বিষয়ে নিজেরা কোনও অনুসন্ধান করিনি।’

বাজারে নকল বা প্লাস্টিকের ডিম নেই কিভাবে নিশ্চিত হয়েছেন, জানতে চাইলে সচিব মো. খালেদ হোসেন বলেন, ‘যারা বলছেন, বাজারে নকল বা প্লাস্টিকের ডিম আছে, তারা উপযুক্ত কোনও তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেননি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি।’