মামলাটি সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আইনজীবীরা বলছেন,এ মামলায় দণ্ডবিধি ও দুদকের দুইটি ধারা। দণ্ডবিধির অপরাধ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছরের কারাদণ্ড। তবে সাজা একবছরের নিচে হলে আপিল শর্তে বিবাদী তাৎক্ষণিক জামিনের আবেদনে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী মতামত দিচ্ছেন তারা। তবে সব কিছু জানা যাবে ৮ ফেব্রুয়ারি। দশ বছর আগে দুদকের দায়ের করা এ মামলায় দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি)ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান রায়ের জন্য এই দিন নির্ধারণ করেন। মামলাটিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ মোট ছয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট এই মামলাটি দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় করা হয়েছে৷ দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা অনুযায়ী,‘যে ব্যক্তি তার সরকারি কর্মচারীজনিত ক্ষমতার বা একজন ব্যাংকার,বণিক, আড়তদার, দালাল, অ্যাটর্নি বা প্রতিভূ হিসাবে তাহার ব্যবসায় ব্যাপদেশে যে কোন প্রকারে কোন সম্পত্তি বা কোন সম্পত্তির উপর আধিপত্যের ভারপ্রাপ্ত হইয়া সম্পত্তি সম্পর্কে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করেন, সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা দশ বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবে।’ এবং দুদক আইনের ৫(২) ধারায় বলা আছে,‘কোন সরকারি কর্মচারী অপরাধমূলক অসদাচরণ করিলে বা করার উদ্যোগ গ্রহণ করিলে তিনি সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের যোগ্য হইবেন।’
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলাটি সংবেদনশীল। আমরা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। এখন রায়ের অপেক্ষা। তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি অপরাধ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন এবং দুর্নীতির ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড হতে পারে। আমরা বিচারাধীন বিষয়ে খুব বেশি কথা বলতে চাই না।’
একবছরের কম সাজা হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে যেতে হবে নাকি তিনি সেই মুহুর্তে জামিন চাইতে পারবেন প্রশ্নে তিনি আরও বলেন,‘যদি একবছরের কম সাজা হয় তবে আপিলের শর্তে তিনি তাৎক্ষণিক জামিন চাইতে পারবেন।’
সেই জামিন আবেদনটি যে আদালত রায় দেবেন সেখানেই করা যাবে নাকি কারাগারে গিয়ে করতে হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,‘হ্যাঁ, ওই আদালতেই তাৎক্ষণিকভাবে বিবাদী তা করতে পারবেন।’
এদিকে, মামলাটির বিচার প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ দুর্নীতি বা দণ্ডবিধির কোনও অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি বলে আবারও দাবি করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আদালতে দুর্নীতির মামলার যে ধারা সেটি বা দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা কোনোটিই প্রমাণিত হয়নি। আমরা আশাবাদী তিনি (খালেদা জিয়া)খালাস পাবেন।’
এদিকে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম খালেদা জিয়ার মামলার ধারাগুলো ব্যাখ্যা করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে ধারায় মামলা তা যদি প্রমাণ হয় তার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন এবং সর্বনিম্ন ১৪ বছরের জেল। আদালত নিজ বিবেচনায় ভিন্ন দণ্ড দিতে পারেন কিন্তু সর্বনিম্নটার বাইরে যাওয়ার কোনও বিধান নেই। দুর্নীতি মামলায় যদি একবছরের নিচে সাজা হয় তাহলেও খালেদা জিয়াকে কারাগারে গিয়েই আপিল করতে হবে।
কোনও মামলায় এক বছর বা তার কম সময়ের শাস্তি হলে আপিল করার শর্তে জামিন পাওয়ার সুযোগ আছে কিনা এবং সেটি ওই আদালতেই তাৎক্ষণিক করা যাবে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, এখানে সাজা একবছর হওয়ার সুযোগ একেবারেই নেই। ফলে জামিনও যদি চাইতে হয় খালেদা জিয়াকে কারাগারে গিয়ে আপিল করতে হবে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশীদ।
মামলায় খালেদা জিয়া ও বড় ছেলে তারেক রহমান ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান৷ মামলার ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়া জামিনে রয়েছেন। মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ কারাগারে থাকলেও তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান পলাতক।