মৃত্যু কারণের টানাপড়েন সমাধান, পলাশের লাশ নিয়ে ফিরলেন স্বজনরা

অবশেষে লক্ষ্মীপুরের সাংবাদিক পলাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তিনদিন পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করে পলাশের মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। গত বৃহস্পতিবার পলাশের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায় নাকি আঘাতের কারণে হয়েছে তা নিয়ে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। মৃত্যুর কারণ বদলে যাওয়ায় শুরুতে মৃত্যুসনদ গ্রহণে অস্বীকার করেন তার পরিবারের সদস্যরা। টানা তিনদিন অপেক্ষার পর রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে তার মৃত্যুসনদে শব্দ পরিবর্তন করার পর ময়নতদন্ত সম্পন্ন হয়।

পলাশের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্রপলাশের বন্ধু রহমান আকাশ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আজ (রবিবার) সকালে তার মৃত্যুসনদ পাই। দুপুরে দেড়টার দিকে পোস্টমর্টেম শুরু হয় এবং শেষ হয় পাঁচটার দিকে। ময়নাতদন্তের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে তার মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

এর আগে, বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা পনের মিনিটে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে মৃত্যু হয় সাংবাদিক পলাশের। তখন তার কাগজপত্র ঠিক করতে গিয়ে স্বজনরা দেখেন চাচাতো ভাইয়ের আঘাতের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পলাশের মৃত্যু সনদে লেখা হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যু। এ নিয়ে স্বজনদের সঙ্গে চিকিৎসকদের মতবিরোধ দেখা দেয়।

স্থানীয় জাহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গতকাল শনিবার এই সনদটি দেওয়ার কথা থাকলেও যে চিকিৎসক তার মৃত্যু সনদ লিখে দিয়েছে তাকে খুঁজে না পাওয়ায় সেটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। গতকাল রাত আটটায় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তানভীর হোসেইন তার ডিউটিতে আসার পর তার কাছে সংশোধনি পাওয়া যায়। এরপরই বাকি কাগজপত্রগুলো ঠিক করা হয়।’

নিহত সাংবাদিক পলাশমাথায় আঘাতজনিত কারণেই লক্ষ্মীপুরের সাংবাদিক শাহ মনির পলাশের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘মাথায় আঘাতজনিত কারণেই তার (সাংবাদিক পলাশ) মৃত্যু হয়েছে। ভারী কোনও বস্তু দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়ে থাকতে পারে।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গের কর্মী আরাফাত বলেন, ‘তাদের ফাইল দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা ঝামেলা হয়েছে সব ঠিক করা হয়েছে। আমাদের এখানে এখন আর কোনও ফাইল নেই। ফাইল সংশোধন করে আমরা জমা দিয়ে দিয়েছি।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘শাহবাগ থানা থেকে তদন্ত করে যাওয়ার পর তাদের সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে।’

পলাশের ডেথ সার্টিফিকেটপলাশের চাচাত ভাই মো. জহির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পলাশের লাশ বাড়ি নিয়ে যেতে দেরি হচ্ছে দেখে আমি গতকাল শনিবার ঢাকায় এসেছি। কারণ বাড়িতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বাড়িতে সবাই মনে করছে যে, যারা পলাশকে মেরেছে তারা প্রভাবশালী, তাদের অনেক আত্মীয় আছে। তারাই হয়তো ঢাকা মেডিক্যালে কিছু একটা করার চেষ্টা করছে। তাদের কারণেই পলাশের লাশ দিতে দেরি হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া সাতটায় মৃত্যুবরণ করেন সাংবাদিক শাহ মনির পলাশ। তার মৃত্যুর পর ডেথ সার্টিফিকেট সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু লেখা দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জানায় পরিবারের সদস্যরা। রবিবার ময়নাতদন্তের পর বিষয়টি সুরাহা হয়।

পলাশের বন্ধু আকাশ বলেন, ‘পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে পলাশকে মাথায় ও বুকে আঘাত করে তার চাচাতো ভাইয়েরা। এরপর তাকে লক্ষ্মীপুরের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকায় রেফার করা হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসময় ভুল করে তার হাসপাতালে ভর্তির কারণ হাসপাতালের লোকেরা সড়ক দুর্ঘটনা লিখে দেয়। যার কারণে এই ভোগান্তি।’