গাছে গাছে বিয়ে, সবুজের সঙ্গে সম্পর্কের মিতালী

বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথিরাপাতাবাহারের গলায় মালা দিলো ক্রিসমাস। হলো মালা বদল। না, শুধু মালা বদল কেন। ক্রিসমাসের বাড়িতে বধূ হিসেবে উঠে গেলো পাতাবাহার। এখন থেকে ক্রিসমাসের মালিককে খবর রাখতে হবে পাতাবাহারের। ঠিকমতো খাবার পেলো কিনা, অসুখ বিসুখ হলো কিনা। মন খারাপের খবরও রাখতে হবে বৈকি! শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এভাবেই বিয়ে হয়ে গেলো পাতাবাহার ও ক্রিসমাসের। তবে তারা কোনও মানুষ নয়,দুটি গাছ। গাছের সঙ্গে গাছের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবুজে সবুজে মিতালীর সঙ্গে মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব তৈরির এক অভিনব কৌশল।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা‘বিয়ার সাজুনি সাজো কন্যা গো..’ গান দিয়েই শুরু হয় গাছের সঙ্গে গাছের বিয়ের অনুষ্ঠান। প্রথমে কাবিননামায় স্বাক্ষর, পরে মালা বদল, এরপর সাক্ষীদের স্বাক্ষর এবং বাতাসা খাওয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় গাছ দুটির বিয়ে। এভাবে একে একে ১০ জোড়া গাছের বিয়ে সম্পন্ন হয়।

একটি সুস্থ, সুন্দর ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে দুটো গাছের মধ্যে বিয়ে দেওয়ার এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। শনিবার বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতর প্রাঙ্গণে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন দুই যুবক। একজন বেনাইল দ্য পাইপার্স এর হাসান বেনাউল ইসলাম, অন্যজন গ্রিন সেভার্স এর ফাউন্ডার আহসান রনি। অন্যদের মধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক সুলতান আহমেদ, চিত্রনায়ক রিয়াজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

গাছে গাছে বিয়েনিজের কেনা গাছ নিয়ে বিয়ে দিতে এসেছেন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি এলাকার তাসলিমা আক্তার। কেন তিনি গাছের বিয়ে দিতে এসেছেন জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আগের মতো নেই। আগে একজন আরেকজনের বাসায় যেতো। ভালো কিছু রান্না হলে অন্যজনের বাসায় দিতো। উৎসব-পার্বণ একসঙ্গে পালন করা হতো। এখন পাশের ফ্ল্যাটে কে থাকে তাই অনেকে জানে না। খোঁজও রাখে না। গাছের সঙ্গে বিয়ে দিতে গিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে নতুন করে সম্পর্ক হবে। গাছের খোঁজ নিতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে গড়ে উঠবে আন্তরিকতা।’ 

গাছের বিয়ের শুরুতেই দুই পক্ষকে পূরণ করতে হয় একটি নিকাহনামা। এতে দেওয়া হয়েছে কিছু শর্ত। এরমধ্যে বলা হয়েছে, ‘দুটো গাছকেই আমরা পরিবারের সদস্য হিসেবে সব ধরনের পরিচর্যা, যত্ন, মর্যাদা এবং অধিকার প্রদান করবো, গাছ দুটো যে পরিবারেই থাকুক না কেন, আমরা নিয়মিতভাবে গাছ জুটির খোঁজখবর রাখবো, শুধু ফোন বা সামাজিক মাধ্যমেই নয়, আমরা এক পরিবার অন্য পরিবারের বাড়িতেও যাবো, আমরা যেখানেই থাকি না কেন সবুজের পাশে থাকবো এবং সবুজের জন্য কাজ করবো, আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমাদের থেকেও বেশি সবুজবান্ধব করে গড়ে তুলবো এবং সবুজের নামে শপথ করে বলছি, আমরা কখনই আমাদের এ অংশীদারিত্ব ভেঙে যেতে দেবো না।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে আহসান রনি বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক আগের মতো নেই। আন্তরিকতাও কমছে। আমরা পাশের বাসার খবরও রাখি না। এই বিয়ের মাধ্যমে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করা আমাদের একটি উদ্দেশ্য। আর একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে গাছ রোপন করা। গাছেরও প্রাণ আছে। বিয়ে দেওয়াটা তাদের বংশবৃদ্ধির একটি প্রতীকী বিষয় হিসেবেও তুলে ধরা হয়েছে।’

হাসান বেনাউল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা শহরের মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা কমে গেছে। গ্রামের মতো সেই আন্তরিকতা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। আমি ঢাকা শহরটাকে গ্রাম বানাতে চাই। এজন্য প্রচুর গাছও দরকার। দরকার প্রচুর আন্তরিকতাও।’

পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক সুলতান আহমেদ বলেন, ‘গাছের সঙ্গে গাছের বিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি একটু উদ্ভট হলেও এর উদ্দেশ্য মহৎ। এর মাধ্যমে যেমন বৃক্ষ রোপনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, তেমনি মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের উদ্যোগের সঙ্গে পরিবেশ অধিদফতর সব সময়ই আছে, থাকবে। ’

বিয়ের অনুষ্ঠানের শুরুতেই হাসান বেনাউলের গাছের সঙ্গে আহসান রনির গাছের বিয়ে হয়। এ বিয়েতে উকিল বাবার দায়িত্ব নেন স্বয়ং পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক আর সাক্ষী ছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। এরপর একে একে বিয়ে হয় আরও ২০টি গাছের। তৈরি হয় নতুন ২০টি পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক।