বৃহস্পতিবার (৮ মার্চ) এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. শফিউল্লাহ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ১৩ জুন কক্সবাজারের রামু উপজেলার পূর্ব ধেচুয়া এলাকায় যান মনোয়ারা বেগম। সেখানে মো. আবুল কালামের বাড়িতে গিয়ে মনোয়ারা বলেন, ‘আমি আত্মীয়ের বাড়ি খুঁজতে এসেছি। কিন্তু পাইনি। যদি রাতে থাকতে দেন তাহলে ভালো হয়। এরপর তাকে কালামের বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয়। পরের দিন সকালে কালামের মেয়ে কক্সবাজার প্রিপারেটরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী রাজিয়া (৮) স্কুলে যায়। সকালে মনোয়ারাও বিদায় নিয়ে বের হন। কিন্তু দুপুরের পর রাজিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে এক লোকের মাধ্যমে কালাম জানতে পারেন, রাজিয়াকে পাচারের উদ্দেশে মনোয়ারা অপহরণ করে নিয়ে গেছে। এরপর ১৭ জুন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ব্রিজের গোড়ায় পুলিশের কাছে শিশু রাজিয়াসহ আটক হন মনোয়ারা।’
পরে এই ঘটনায় করা মামলায় ২০০১ সালের ২৭ নভেম্বর কক্সবাজারের বিচারিক আদালত ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন অধ্যাদেশের ১২ ধারায় মনোয়ারাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
এসব বিষয় আদালতে তুলে ধরে আইনজীবী শফিউল্লাহ বলেন, ‘মনোয়ারা বেগম গরিব। তার উকিল নিয়োগের সামর্থ্য নেই। তাই ওই দণ্ডের পরও তিনি আপিল কিংবা জামিন আবেদন করতে পারেননি।’
এ সময় আদালত বলেন, ‘‘তার বয়স কত? জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘ঘটনার সময় তার বয়স ২৫ বছর ছিল। এখন ৪৫ হয়েছে।’’
আদালত বলেন, ‘‘বাবা, মা ও আত্মীয়স্বজন আছে? জামিন দিলে কোথায় যাবে? সে কি বিবাহিত? আইনজীবী বলেন, ‘তার ঘরবাড়ি আছে। দরিদ্র তো, তাই হয়তো কারও সঙ্গে যোগাযোগ নাই।’’
পরে আদালত বলেন, ‘‘আজ তো আন্তর্জাতিক নারী দিবস। কিন্তু তার দীর্ঘ কারাবাস বিবেচনায় তাকে জামিন দিলাম। আর জামিনে মুক্তির পর মনোয়ারা যদি মনে করে তার সামাজিক পুনর্বাসন দরকার, তাহলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও সমাজসেবা অফিসার তাকে পুনর্বাসন করবেন।’’
একইসঙ্গে এ রকম যারা দীর্ঘ কারাবাসে আছে তাদের মুক্তির পর যদি সামাজিক পুনর্বাসন দরকার হয় তাহলে সরকার সেটা করবেন। আর আদালতের এ আদেশ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, আইন সচিব ও সমাজকল্যাণ সচিব বরাবর পাঠানো হবে।