মালি থেকে কোটিপতি!

সেলিম মোল্যা

গণপূর্ত অধিদফতরের মালি ছিলেন মানিকগঞ্জ হরিরামপুরের সেলিম মোল্যা (৪৯)। পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন ইডেন গণপূর্ত বিভাগের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক। তার মোট সম্পদের মূল্য ৩ কোটি ১০ লাখ ১৭ হাজার ৪৩৫ টাকা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রীর নামে রয়েছে ঢাকায় ফ্ল্যাট ও গাড়ি। নিজের নামে রয়েছে গাড়ি ও ট্রাক। গ্রামের বাড়িতেও আছে তিন তলা বাড়ি ও বহুতল মার্কেট। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে। 

জানা যায়, প্রথমে মালি ও পরবর্তী সময়ে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত সেলিম মোল্যা কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন তা অনুসন্ধান করতে গত বছর তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বছরের ১৮ অক্টোবর তার সম্পদের বিবরণী চাওয়া হয় এবং ৩১ অক্টোবর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন সেলিম মোল্যা।

দুদক সূত্রে জানা যায়, দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাই করে ২ কোটি ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৬ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়াও তিনি সম্পদ বিবরণীতে ২ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার ৯৮৫ টাকা মূল্যের তথ্য গোপন করেন। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে তা ভোগ করার অপরাধে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক মো. ফরিদুর রহমান।

সেলিম মোল্যা সম্পর্কে জানা গেছে, তিনি প্রথমে গণপূর্ত অধিদফরের আরবরি কালচার ডিভিশনের মালি ছিলেন। এরপর যোগদান করেন ইডেন গণপূর্ত বিভাগ ইডেন কেয়ার টেকিংয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুরে। ঢাকার উত্তর শাহজাহানপুরে তাকেন তিনি।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেলিম মোল্যার তৃতীয় স্ত্রী হাফিজা খানের নামে উত্তর শাহজাহানপুরে ফ্ল্যাট, টয়োটা প্রিমিও গাড়ি; দ্বিতীয় স্ত্রী পারভীন আক্তারের নামে খিলগাঁও পুনর্বাসিত এলাকায় প্লট; এছাড়াও তার নিজের নামে মাইক্রোবাস ও ট্রাক রয়েছে। এছাড়া গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে রয়েছে তিন তলা বাড়ি ও বহুতল বিশিষ্ট মার্কেট রয়েছে তার।

এ ব্যাপারে দুদকের উপপরিচালক মো. ফরিদুর রহমান জানান, সেলিম মোল্যার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাই করে ৩ কোটি  ১০ লাখ ১৭ হাজার ৪৩৫ টাকা মূল্যের সম্পদ পাওয়া যায়। যা তিনি ২০১০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে অর্জন করেছেন। তিনি সম্পদ বিবরণীতে তার অর্জিত সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেন ৮০ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫০ টাকা। ফলে বিবরনীতে তিনি ২ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার ৯৩৫ টাকা গোপন করেছেন।     

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলা ও দুদকের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে দুদকের উপপরিচালক মো. ফরিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা মামলা দায়ের করেছি। এখন তদন্ত হবে। সে অনুযায়ী আমরা চার্জশিট প্রদান করব।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজনক কর্মকর্তা বলেন, ‘একজন মালি থেকে কীভাবে সে এত টাকার মালিক হয়েছে এটা খুঁজে বের করা হবে। তার দুর্নীতির সঙ্গে নিজ দফতর ও অন্য কারা জড়িত রয়েছে সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।’

এ ব্যাপারে সেলিম মোল্যার কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে ইডেন গণপূর্ত বিভাগ এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিনি আমাদের এখানে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে বলে শুনেছি। আমরাও তার বিষয়ে হেড অফিসে রিপোর্ট পাঠিয়েছি।’