শাহরিন ও শাহীনের অস্ত্রোপচারে প্রস্তুত চিকিৎসকরা

শাহরিন আহমেদ ও শাহীন ব্যাপারীনেপালে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনায় আহত শাহরিন আহমেদ ও ব্যবসায়ী শাহীন ব্যাপারীর অস্ত্রোপচার আগামীকাল বুধবার (২১ মার্চ) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, এই অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতিও চিকিৎসকরা নিয়েছেন।
এদিকে, শাহরিন ও শাহীনের স্বজনদের সময় কাটছে এখন ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আশপাশেই। আহত দু’জনকে নিয়ে শঙ্কা থাকলেও হাসপাতালের চিকিৎসাসহ সার্বিক পরিচর্যায় তারা খানিকটা সন্তোষ জানিয়েছেন।
নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি আছেন শাহরিন আহমেদ, শাহীন ব্যাপারী, কবির হোসেন, সৈয়দ রাশেদ রুবাইয়াত, সৈয়দা কামরুন নাহার স্বর্ণা, আলীমুন নাহার এ্যানী ও মেহেদী হাসান মাসুম। তাদের শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চাইলে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন মঙ্গলবার (২০ মার্চ) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কবির হোসেন ও শাহরিনের শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। তাই তাদের আইসিইউতে শিফট করা হয়েছে। এখন কেবিনে আছেন সৈয়দ রাশেদ রুবাইয়াত ও সৈয়দা কামরুন নাহার স্বর্ণা। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল।’
ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, আলীমুন নাহার এ্যানী ও মেহেদী হাসান মাসুম হাসপাতালে ফিরে আসার শর্তে পরিবারের সদস্যদের জানাজায় অংশ নিতে গিয়েছেন। আর শাহরিন ও শাহীনের অস্ত্রোপচার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই দু’জনের সার্জারি আগামীকাল (বুধবার) করা হবে। তাদের চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছে।’
মঙ্গলবার বার্ন ইউনিটের করিডোরে কথা হয় শাহরিন আহমেদের মা ফেরদৌসি মোশতাকের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাল (বুধবার) শাহরিনের অপারেশন করা হবে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। আজ (মঙ্গলবার) ওর ভালো ঘুম হওয়া দরকার ছিল। সেই ব্যবস্থাও তারা করেছেন। ডাক্তাররাও বলে গেছেন, আমরা সবাইকে বারবার বলছি, ওর সঙ্গে যেন কেউ কথা না বলে।’
ফেরদৌসি মোশতাক আরও বলেন, ‘আল্লাহর রহমত থাকলে অপারেশনটা ঠিকমতো হলেই ও (শাহরিন) সুস্থ হয়ে উঠবে। ওর পিঠের দিকে একটা অপারেশন হওয়ার কথা রয়েছে। এর জন্য রক্ত লাগবে। ওকে রক্ত দেওয়া হয়েছে।’
বার্ন ইউনিটের চিকিৎসা ও অন্য বিষয়গুলো নিয়ে শাহরিনের মা আরও বলেন, ‘আমি শাহরিনের জন্য বাসা থেকে দুই বেলা খাবার নিয়ে আসছি। ওই খাবারই খাচ্ছে। আর এখানকার (বার্ন ইউনিট) সবাইও ওর খুব ভালো যত্ন নিচ্ছে। ক্লিনিং থেকে শুরু করে চিকিৎসক-নার্সদের যত্ন খুবই ভালো। ওরা এত যত্ন নিচ্ছে, ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’
শাহীন ব্যাপারীর কেবিনের গেটে মলিন মুখে দাঁড়িয়েছিলেন তার মা জাহানারা বেগম (৬৫)। তিনি বলেন, ‘এরা বলেছে, ও (শাহীন) যেন বেশি কথা না বলে। ওকে তরল খাবার খেতে দিচ্ছে। আমি তো কিছু বুঝি না, ডাক্তাররা যা ভালো বুঝছেন তেমনই করছেন। যখনই প্রয়োজন হচ্ছে, ড্রেসিংও করছে ওর।’
শাহীন ব্যাপারীর ভাই মো. শাহাদাত হোসেন চঞ্চল (৩৫) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) সকালে ভাইয়ের সিটি স্ক্যান করেছে। পরে অবস্থা খারাপ হওয়ায় আইসিইউতে নিয়ে যায়। এখন দোতলায় আইসিইউতেই আছে। অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন বলেই জানিয়েছেন ডাক্তাররা। নেপাল থেকে আনার দিন যেমন অবস্থা ছিল, এখনও সেই অবস্থাতেই আছে।’
চার বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে শাহীন ব্যাপারীই সবার বড়। তার সুস্থতা নিয়ে আশাবাদী ভাই শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভাইকে এখানে (বার্ন ইউনিট) আনা হয়েছে। এখানে খুব ভালোভাবে তার দিকে খেয়ালও রাখছে। ভাইয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তারা অবস্থা দেখে ব্যবস্থা নেবেন। যেহেতু খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এখানে তার চিকিৎসা চলছে, আমরা আশাবাদী যে ভাই সুস্থ হয়ে উঠবে।’
তবে বার্ন ইউনিটে কর্তব্যরত পরিচ্ছন্নতাকর্মী, আয়া ও ওয়ার্ড বয়দের আচরণ নিয়ে অভিযোগ করেছেন শাহাদাত। তিনি বলেন, রুম পরিষ্কারের সময় ক্লিনার টাকা নিয়েছে। মায়ের সঙ্গে বাজে আচরণও করেছে। অনেক সময়ই ডেকে ওয়ার্ড বয় বা আয়া— কাউকেই পাওয়া যায় না।
আরও পড়ুন-
ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে সম্পৃক্ত হতে চায় যুক্তরাজ্য