কারও সঙ্গে কথা বলছেন না এ্যানী

স্বামী প্রিয়ক ও মেয়ে তামাররা’র সঙ্গে এ্যানীনেপালে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় স্বামী প্রিয়ক ও মেয়ে তামাররাকে হারানো আলীমুন নাহার এ্যানী শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও মানসিকভাবে সুস্থ নেই। তিনি কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। একা থাকতেই বেশি পছন্দ করেন বলে জানালেন তার দেবর রাসেল (২৮)। তার মানসিক অবস্থা ভালো রাখার জন্য পরিবারের সদস্যরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু এটা এমন ক্ষত, যা দূর করা সহজ নয় বলেন রাসেল।

কাঠমান্ডু থেকে ফিরে আসা ইউএস-বাংলার আরোহী মেহেদী হাসান, আলীমুন নাহার এ্যানী ও সৈয়দা কামরুন নাহার স্বর্ণার আত্মীয় রাসেল (২৮) বলেন, ‘উনারা এখন ভালো আছেন। মেহেদী ভাই একটু একটু করে হাঁটতে পারছেন। এ্যানী ভাবি ও স্বর্ণা ভাবিও ভালো আছেন। এ্যানী ভাবি তার স্বামী-সন্তানের মরদেহ দেখেছেন। তিনি এখন বুঝতে পারছেন যে, তার স্বামী ও সন্তান আর বেঁচে নেই। তারা তিন জনই আপাতত হাসপাতালে ভর্তি থাকবেন।’ 

এই পরিবারের আরেক সদস্য মো. মনির (২৮) বলেন, ‘‘তারা তিন জনই এখন ভালো আছেন। সুস্থ আছেন।তবে মেহেদী ভাইয়ের ঘাড়ের ব্যথাটা বেড়েছে। তার শরীরের পোড়া চামড়া শুকিয়েছে। এ্যানী ভাবির মনের অবস্থা একেবারেই ভালো না। তিনি কারও সঙ্গেই কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। একা একা থাকতে চাইছেন। এ্যানী বলেছেন, ‘আমার কারও সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে না। আমাকে একা থাকতে দেন।’ তিনি স্বামী ও মেয়ের লাশ দেখেছেন। এখন বিশ্বাস করছেন যে, তার স্বামী-সন্তান বেঁচে নেই।’’

মো. মনির বলেন, ‘মেহেদী ভাই প্রথমে আর্মি স্টেডিয়ামে গেলেন জানাজা পড়তে। এরপর বাড়িতে গেলেন। নড়াচড়া বেশি হওয়াতে তিনি বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তবে আশা করি, এটা সেরে যাবে।’
তিনি বলেন, প্রিয়ক ভাইয়ের আম্মা তো বাড়িতে একা। এতদিন তার ছেলে, ছেলের বউ আর নাতনি ছিল। এখন তিনি সম্পূর্ণ একা। এ্যানী ভাবি এখানে হাসপাতালে আছেন। তিনিও (প্রিয়কের মা-এ্যানীর শাশুড়ি) খুবই মানসিক কষ্টে আছেন, তবে তার শরীর এখন মোটামুটি ভালো আছে।’ 

হাসপাতালে ভর্তি আহত রোগীদের বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমাদের এখানে যে সাত জন ভর্তি আছেন, তাদের মধ্যে কবির  হোসেন ও শাহীন ব্যাপারীর অবস্থা সংকটাপন্ন। এছাড়া মেহেদী হাসান, আলীমুন নাহার এ্যানী, সৈয়দা কামরুন নাহার স্বর্ণা, শেহরিন আহমেদ ও সৈয়দ রাশেদ রুবাইয়াত সবাই ভালো আছেন।’

এর আগে ডা. সেন বলেছিলেন, এ্যানীর ডান পায়ে ফ্র্যাকচার ও ইনজুরিও আছে। স্বর্ণার শরীরের বাম দিকে ব্যথা, ইনজুরি এবং শ্বাসনালীতে বার্ন আছে। মেহেদীর হাতে কাটা দাগ, ঘাড়ে ও পায়ে ইনজুরি ও ফ্র্যাকচার আছে।’

সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘তিন জনের প্রত্যেকেই সাইকোলোজিক্যাল ট্রমার মধ্যে আছে। এদের কোনও পোড়া নেই। কিন্তু তাদের শরীরে আঘাত ও শ্বাসনালীর ইনজুরি আছে। সেজন্য তাদেরকে অর্থোপেডিকস এবং রেসপিরেটরি মেডিসিনের চিকিৎসকদের দেখানো হবে।’ এই তিন জনের সুস্থ হতে ন্যূনতম ছয় সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ স্বামী-সন্তান,আত্মীয়সহ পাঁচ জন মিলে নেপালে ভ্রমণে যান এ্যানী। তাদের বহনকারী ইউএস-বাংলার বিমানটি কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগ মুহূর্তে বিধ্বস্ত হয়। এসময় বিমানটিতে ৬৭ জন যাত্রী ও চার জন ক্রুসহ ৭১ জন আরোহী ছিলেন। এঘটনায় এ্যানীর স্বামী ফটোগ্রাফার ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও তাদের চার বছরের মেয়ে তামাররা প্রিয়ন্ময়ীসহ ২৬ জন বাংলাদেশি, ২২ জন নেপালি ও একজন  চীনা নাগরিক নিহত হন। নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ২৩ জনের মরদেহ গত সোমবার (১৯ মার্চ), বাকি তিন জনের মরদেহ  বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) দেশে আনা হয়। 

এছাড়া, ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনায় আহত ১০ জন বাংলাদেশির মধ্যে সাত জন দেশে ফিরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে গত ১৫ মার্চ শেহরিন আহমেদকে ঢাকায় আনা হয়। পরদিন ১৬ র্মাচ দেশে আসেন মেহেদী, স্বর্ণা ও এ্যানী। ১৭ মার্চ সৈয়দ রাশেদ রুবাইয়াত, ১৮ মার্চ শাহীন ব্যাপারী এবং ১৯ মার্চ কবির হোসেন দেশে আসেন। নেপালে আহত অন্য দুই বাংলাদেশি ইমরানা কবির হাসি ও ডা. রেজওয়ান আহমেদ সিঙ্গাপুরে এবং ইয়াকুব আলী ভারতে চিকিৎসাধীন আছেন।