২০১৬ সালের শেষের দিকে পড়ালেখার উদ্দেশ্যে সাত সোমালিয়ান শিক্ষার্থী ঢাকায় আসেন। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ভর্তি হন ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচারার অ্যান্ড টেকনোলজিতে (আইইউবিএটি)। এর তিন মাস পরই তারা নিখোঁজ হন। তারা হলেন- সাকিদ হাসান বুয়ে, আবদি রহমান আব্দুল্লাহি হাসান, মোহাম্মদ আবুকার দাহির, আলী সালাদ, সাকির ওমর শেইখ আব্দুলকাদির, আব্দির রহমান আব্দুল্লাহি হাসান ও সিরাজি মোহাম্মদ আলী। এরমধ্যে সিরাজির সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি উত্তরার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। বাকিদের এখনও খোঁজ মেলেনি।
আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সোমালিয়া, নেপাল ও মালদ্বীপ থেকে এসে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করছে। ২০১৬ সালের ফল সেমিস্টারে ৭ সোমালিয়ান শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তারা একটি সেমিস্টার সম্পন্ন না করেই অনুপস্থিত হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনও সাড়া মেলেনি। পরে তাদের সন্ধান করেও পাওয়া যায়নি।
বাকি ৬ সোমালিয়ান শিক্ষার্থীর পাসপোর্ট এখনও আইইউবিএটিতেই জমা রয়েছে।
আইইউবিএটির ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার এম এ মাজেদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিখোঁজরা বিদেশি শিক্ষার্থী বলেই বিষয়টি উদ্বেগের। বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে পড়াশোনা জন্য অবস্থানকালে অন্য কোনও কাজে জড়িত থাকতে পারে না। তাদের মোবাইল ফোন নম্বরেও অনেকবার চেষ্টা করেছি, কিন্ত কোনও সাড়া মেলেনি। পরে থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘জিডির আট মাস পার হলেও পুলিশ আমাদের এখনও কিছু জানায়নি।’
নিখোঁজ সাত সোমালিয়ানের মধ্যে সিরাজি মোহাম্মদ আলী নামের এক শিক্ষার্থীর সন্ধান মিলেছে। তিনি ২০১৬ সালের ফল সেমিস্টারে বিবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে ফল সেমিস্টারের মিড টার্ম পর্যন্ত থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত হয়ে যান। এর তিন মাস পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, পরে ২০১৭ সালের জুন মাসে তিনি তার বকেয়া সেমিস্টার ফি পরিশোধ করে পাসপোর্ট নিয়ে যান।
নিখোঁজের পর সন্ধান পাওয়া সোমালিয়ান শিক্ষার্থী সিরাজি মোহাম্মদ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি সেখানে ভর্তি হয়েছিলাম, কিন্তু আমার ভালো লাগেনি। তাই আমি সেখানে আর পড়াশোনা চালাইনি। পরিবর্তন করে আমি শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ-তে ভর্তি হয়েছি। আমি এখানেই পড়াশোনা করছি।’
বিএসসিই (সিভিল) প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী সাকিদ হাসান বুয়ে। ২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বিএসসিই (কম্পিউটার সাইয়েন্স) প্রোগ্রোমের শিক্ষার্থী আবদি রহমান আব্দুল্লাহি হাসান। ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়।
বিএসসিই (কম্পিউটার সায়েন্স) প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবুকার দাহির। ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর তার পাসপোর্টর মেয়াদ শেষ হয়েছে। বিএসসিই (সিভিল) প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী আলী সালাদ। ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তার পাসপোর্টর মেয়াদ শেষ হয়।
বিএসসিই (সিভিল) প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী সাকির ওমর শেইখ আব্দুলকাদির। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট তার পাসপোর্টর মেয়াদ শেষ হয়। বিএসইইই (ইলেক্ট্রিক্যাল) প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী আব্দির রহমান আব্দুল্লাহি হাসান। ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট তার পাসপোর্টর মেয়াদ শেষ হয়েছে।
আইইউবিএটির ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার এম এ মাজেদুর রহমান বলেন, ‘তাদের মধ্যে এখনও কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এই সোমালিয়ান শিক্ষার্থীরা বানানা টিম এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশে পড়তে আসেন, ওই এজেন্সি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।’
‘বানানা টিম’ ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি টিউটরস সহযোগী একটি গ্রুপ। এজেন্সিটির বিশ্বের ১৫ দেশের ৫০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। সোমালিয়াতে বানানা টিম এজেন্সির একটি শাখা রয়েছে। সোমালিয়ার মোগাদিসুর হাউলাডাগ সড়কের হরমোড টাওয়ারের বিপরীতে বাকারো মার্কেটে এজেন্সির কার্যালয়। সোমালিয়া অফিসের সিইও আব্দুল্লাহি হাজি নুর।
সাধারণত ‘বানানা টিম’ এর মাধ্যমে সোমালিয়া থেকে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন। শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মিডিয়া হয়ে কাজ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অন্তত ৪৩ জন সোমালিয়ান শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্রোগ্রামে পড়াশোনা করছেন। নিখোঁজের তালিকায় থাকা সাত সোমালিয়ান শিক্ষার্থীও বানানা টিমের মাধ্যমেই এসেছিলেন। তারা সবাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ভর্তি হয়েছিলেন।