নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তে আহত শাহীন ব্যাপারী মারা গেছেন। দেশবাসীর দোয়া, চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধান-সবকিছু তুচ্ছ করে সোমবার (২৬ মার্চ) বিকাল ৫টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ঢামেক হাসপাতালে শাহীন ব্যাপারীঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসক অধ্যাপক আবুল কালাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওই বিমান দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন শাহীনসহ ১০ জন। বাকিরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে, শাহীন ব্যাপারীর মৃত্যু খবরে বার্ন ইউনিট চত্বরে এক বেদনাবিধূর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তার স্ত্রী-কন্যাসহ স্বজনরা বুক ফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে হাসপাতালের পরিবেশ। শাহীন ব্যাপারীর ছোট্ট মেয়ে সূচনা কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘এ তুমি কী করলে বাবা! অামাকে ছেড়ে তুমি চলে গেলে। অামি এখন কী নিয়ে বাঁচব।’ তার কান্না শুনে সেখানে উপস্থিত মিডিয়া কর্মীরাও চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।
শাহীন ব্যাপারী (ফাইল ফটো)সোমবার দুপুরেই বার্ন অ্যন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ খন্দকার জানিয়েছিলেন, শাহীন ব্যাপারীর অবস্থার হঠাৎ করে অবনতি হয়েছে। তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। গত বুধবার ঢামেক হাসপাতালে শাহীন ব্যাপারীর অস্ত্রোপচার শেষ হয়েছিল। তখন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছিলেন, শাহীন ব্যাপারীর আরও অস্ত্রোপচার করতে হবে।
ঢামেকে মায়ের কোলে শাহীন ব্যাপারীর মেয়ে সূচনাগত ১৮ মার্চ ইউএস-বাংলার একটি বিমানে নেপাল থেকে আহত শাহীন ব্যাপারীকে দেশে অানা হয়। তাকে যখন হুইলচেয়ারে করে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানো হয়, তখন তিনি কাঁদছিলেন। অার বলছিলেন, অাল্লাহ এমন বিপদ তুমি কাউকে দিও না।
শাহীন ব্যাপারীর চাচা শাহজাহান ব্যাপারী এসময় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিজেরা চিকিৎসা করালে ঢাকা মেডিক্যালে অানতাম না। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী নিজে চিকিৎসার বিষয় দেখছেন, তিনি বলাতে এখানে অানা হয়েছে। নেপালি চিকিৎসক শাহীনের ১৬ শতাংশ বার্ন বললেও পরে তার ৩২ শতাংশ বার্ন হয়েছে বলে জানান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। প্রথমে তাকে কেবিনে রাখলেও অবস্থা খারাপ হওয়ায় অাইসিইউতে নেওয়া হয়।’ এখানে তার দু’দফা অস্ত্রোপচার করেন বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ১৬ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড।
শাহীন ব্যাপারীর স্বজনদের আহাজারিগত ১২ মার্চ ঢাকা থেকে রওনা দেওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ৬৭ যাত্রীসহ ৭১ জন আরোহীর মধ্যে ৪৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশি ২৬ জন। আহত ১০ বাংলাদেশির মধ্যে প্রথম দেশে নিয়ে আসা হয় শাহরিনকে। দুর্ঘটনার পরের বৃহস্পতিবার তাকে ভর্তি করা হয় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। মেহেদী হাসান সুমন, সৈয়দা কামরুন নাহার স্বর্ণা ও আলমুন নাহার এ্যানিকে দেশে আনা হয় শুক্রবার। পরে শনিবার শেখ রাশেদ রুবায়েত এবং রবিবার কবির হোসেন ও শাহীন ব্যাপারীকে দেশে নিয়ে আসা হয়েছিল।