রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে একক আধিপত্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের হাতে। আবাসিক হলের নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে দলীয় কর্মসূচিতে ক্যাম্পাসে সক্রিয় ছাত্রলীগ। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রলীগ কমিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিক মারধর, প্রক্সি জালিয়াতি, আবাসিক হলে সিট বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাত্র সংগঠনটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় জড়িত থাকায় দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হলেও পরে আবার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
ছাত্রলীগের আধিপত্যের কারণে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে কোনও কর্মসূচি দিতে পারে না ছাত্রদল। সবশেষ ২০১৭ সালের ২১ অক্টোবর ক্যাম্পাসে ব্যানার, ফেস্টুন টানাতে গেলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনার পর ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের আর কোনও কর্মসূচি চোখে পড়েনি। ছাত্রদলের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে কোনও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই।
শিবিরকেও কোণঠাসা করে রেখেছে ছাত্রলীগ। শিবিরের বিরুদ্ধে ‘অভিযান’ অব্যাহত রেখেছে তারা। মাঝে-মধ্যেই হলগুলোতে শিবিরবিরোধী কার্যক্রম চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শিবির সন্দেহ গত এক বছরে অন্তত ৫০ শিক্ষার্থীকে মারধর করে পুলিশেও দিয়েছে তারা। এরমধ্যে ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট রাতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ১৩ শিক্ষার্থী এবং এ বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৯ শিক্ষার্থীকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে পুলিশে দেওয়ার ঘটনা ছিল আলোচিত। এসব ঘটনার সমুচিত জবাব দেওয়ার হুমকিও দেয় ছাত্রশিবির।
জানা যায়, গত বছরের ১০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাস ভাঙচুরের ঘটনার ছবি তুলতে গেলে এক সাংবাদিককে মারধর করেন ছাত্রলীগের সাত-আটজন নেতাকর্মী। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় ওইদিন সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয় এবং তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কাননকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
একই বছরের ১৮ জুলাই রাজশাহীর মোহনপুরে ডিগ্রি (পাস) পরীক্ষায় অন্যের হয়ে পরীক্ষা (প্রক্সি) দিতে গিয়ে আটক হন রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন। ওই ঘটনায় তিন দিন পর ২১ জুলাই সাব্বির হোসেনকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু রাবি ছাত্রলীগের সুপারিশে গত ১৮ নভেম্বর সাব্বির হোসেন ও মাহমুদুর রহমান কাননের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সবশেষ গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাবি ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সাংবাদিক ‘হত্যাচেষ্টা’ মামলার আসামি সাইফুল ইসলাম বিজয়ের বহিষ্কারদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
এ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার পর গত ৬ মার্চ ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নাট্যকর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কাননের বিরুদ্ধে।
ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংগঠনবিরোধী কাজের জন্য যথাযথ শাস্তি না পাওয়ায় কেউ অপরাধ করতে তোয়াক্কা করছে না। অনেকেই বহিষ্কারকে ‘নাটক’ বলে মনে করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। অতীতে এই ক্যাম্পাসে শিবির ও ছাত্রদলের আধিপত্য ছিল। কিন্তু আমরা তাদের কঠোর হাতে প্রতিহত করেছি, ভবিষ্যতেও করবো। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ ঠিক রাখতে আমরা সচেষ্ট থাকবো।’
নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্রদলের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করলে আপনারা কোনও ব্যবস্থা নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের ক্যাম্পাসে কোনও অবস্থান নেই। তবে তারা যদি ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে তাদেরও প্রতিহত করবো।’
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২৫তম কাউন্সিল অধিবেশন হয়। এরপর ১১ ডিসেম্বর ১৩ সদস্যের এক বছর মেয়াদি প্রাথমিক কমিটির ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর প্রায় ছয় মাস পর ১৮ জুন পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৫১ সদস্যের ওই কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে ৪২ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ১০ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ১০ জন, প্রচার সম্পাদক ও দফতর সম্পাদকসহ বিভিন্ন সম্পাদক পদে ৩২ জন, উপ-সম্পাদক পদে ৩২ জন, সহ-সম্পাদক পদে ১৩ জন এবং সদস্য হিসেবে ১২ জনকে পদ দেওয়া হয়।