শঙ্কামুক্ত নন হৃদয়, তবে আশাবাদী চিকিৎসকরা


হাত হারিয়ে ঢামেকে চিকিৎসাধীন গোপালগঞ্জের খালিদ হাসান হৃদয়
রাজীবের হাত হারিয়ে মৃত্যুর যন্ত্রণাদগ্ধ স্মৃতি দেশবাসী সামলে ওঠার আগেই আবারও একই ধরনের ঘটনার শিকার হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন গোপালগঞ্জের খালিদ হাসান হৃদয় (২০)। চিকিৎসকদের বলছেন শঙ্কামুক্ত নন হৃদয়, তবে তাদের আশা, সেরে উঠবেন তিনি। এদিকে, ছেলের এই শারীরিক অবস্থায়  রাজীবের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটুক তাই মনে প্রাণে চাইছেন হৃদয়ের বাবা।  

গত মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে দশটার দিকে গোপালগঞ্জের বেতগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে দুর্ঘটনার শিকার হন হৃদয়। সেদিনই বিকালে হাত হারানো হৃদয়কে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার পরিবার। বর্তমানে ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের ২০ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন হৃদয়। তার সঙ্গে হাসপাতালে রয়েছেন বাবা মো. রবিউল ইসলাম ও মা শাহিদা বেগম।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাবা মায়ের তিন সন্তানের সবার ছোট হৃদয়। বাবা যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, লেখাপড়া শেষ না করেই হৃদয়ও সেই প্রতিষ্ঠা চাকরিতে ঢোকেন। বাবা-ছেলের আয়ে তাদের সংসার ভালো চলছিল। হঠাৎ করেই সুখী এই পরিবারে ছন্দপতন।

আহত হৃদয়ের বেডের পাশে বসে তার বাবা রবিউল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে দশটার দিকে গোপালগঞ্জের বেতগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে দুর্ঘটনার শিকার হয় হৃদয়। এরপর  তাকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার পর ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়ে বিকালে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা।’
হৃদয় ‘টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের’ বাস সহকারী। নিজের ডিউটি শেষে তিনি অফিসের কাগজ পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় রাস্তায় এই দুর্ঘটনায় পড়েন।
রবিউল ইসলাম বলেন, ‘চিকিৎসকরা বলেছেন, হৃদয়ের অবস্থা ভালো। আরও কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা বাকি আছে।’
হৃদয়ের চিকিৎসার ব্যয় বর্তমানে তার বাবাই বহন করছেন।  তিনি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, তারাও খরচ দেওয়ার কথা বলেছেন বলে জানান রবিউল ইসলাম।
হৃদয়ের চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জামান শাহীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এক হাত হারানো রাজীব হাসপাতাল ছেড়ে যেতে না যেতেই হৃদয় এসে হাজির হয়েছেন। ওরও অবস্থা একই। ওর হাতও একইরকম ভাবে কাটা। ওর কাটা হাতটা আমরা পাইনি। তবে, ভালো দিক এটাই যে  তিনি বাসের ভিতরে বসে থাকার কারণে তার মাথায় তেমন একটা ইনজুরি হয়নি বলে মনে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তবে, আমরা এই ধরনের রোগীদের আশঙ্কামুক্ত বলি না। ওর (হৃদয়) অবস্থা স্থিতিশীল তবে, ওর পুরোপুরি অবস্থা  বোঝার জন্য ৩-৫ দিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তার জন্য নিউরো সার্জনের সঙ্গে কনসাল্ট করা হবে। আমরা হাসপাতালের রিপোর্টে দেখেছি যে, ওর হেড ইনজুরি নাই। ওর মাথায় আঘাত কম লেগেছে। এখানে আসার পরও তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। আরও কিছু  পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন হবে।’
ডা. শামসুজ্জামান শাহীনবলেন, ‘আমরা রাজীবের বেলায় তিনবার সিটি স্ক্যান করেছি। প্রথম রিপোর্ট খারাপ ছিল। পরের রিপোর্ট স্থিতিশীল ছিল। শেষের রিপোর্টে দেখা গেল ওর অবস্থা এত খারাপ যে ওকে আর অস্ত্রোপচার করার মতো অবস্থাই নেই। এখন হৃদয়ের ক্ষেত্রে আদৌ কী ঘটবে বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে, আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, হৃদয়ের হাত ছিন্ন হওয়ার ঘটনায় জড়িত ট্রাকটির চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এর আগে গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের কাছে দুর্ঘটনায় নগরীর তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীবের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রথমে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতাল, পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোমবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টায় তার মৃত্যু হয়। পরদিন দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ নিয়ে যায় পরিবার।