মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এনএসআই’র সাবেক ডিজি’কে গ্রেফতার

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক মো. ওয়াহিদুল হককে (৬৯)  গ্রেফতার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারির পর  মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) তাকে গ্রেফতার করে গুলশান থানা পুলিশ।

গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা এসে পৌঁছানোর পর আজ (মঙ্গলবার) দুপুর দেড়টার দিকে বারিধারার একটি বাসা থেকে মো. ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতার করে গুলশান থানা পুলিশ। তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করা হয়েছে।

এর আগে এদিন এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি আমির হোসেনের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।

ট্রাইব্যুনালে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। পরে তিনি সাংবাদিকদেরকে ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

প্রসঙ্গত, আসামি ওয়াহিদুল হক মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় রংপুরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাকে গ্রেফতার চেয়ে আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতার করতে ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানা জারি করেন।

তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা যায়, আসামি ওয়াহিদুল হকের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। ১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ১১ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট কমিশন প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে বদলি সূত্রে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে যোগদান করেন। এরপর সেখান থেকে পাকিস্তানের মুলতান ক্যান্টনমেন্টে চলে আসেন। পরে ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট রংপুর সেনানিবাসে স্থানান্তরিত হন। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত এই রেজিমেন্টের অ্যাডজ্যুটেন্ট হিসেবে রংপুর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে বদলি হয়ে আবার তিনি পাকিস্তান (পশ্চিম পাকিস্তান) চলে যান। সেখানে তিনি ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করেন।

১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি দেশে ফিরে আসেন। সে সময় তাকে সেনাবাহিনী থেকে অবসর দেওয়া হয়। এরপর ১৯৭৬ সালের ১ অক্টোবর ওয়াহিদুল হক বাংলাদেশ পুলিশের এএসপি হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে কুমিল্লার এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরে ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ১৯৮২ সালে নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটনে অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এরপর ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম রেঞ্জে তিনি ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হিসেবে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এনএসআই’র পরিচালক ছিলেন। পরে একই সংস্থার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পান। এরপর ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি পাসপোর্ট অফিসের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০২ সাল তিনি পুন:নিয়োগ পান। পরে ২০০৫ সালে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অভিযোগ রয়েছে, ওয়াহিদুল হক ১৯৭১ সালে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর রংপুর ক্যান্টনমেন্টে হত্যা-গণহত্যার ঘটনা ঘটান। পাকিস্তান আর্মির সদস্য হিসেবে সেই ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তদন্ত সংস্থায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আসে। সেই অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে ৫শ’ থেকে ৬শ’ নিরস্ত্র বাঙালি ও সাঁওতালকে ধরে এনে মেশিনগান দিয়ে তাদের হত্যার ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন। এছাড়াও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।