ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উল্টো এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে তাদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দেওয়া খারাপ মূল্যবোধের দৃষ্টান্ত। তাই অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া নিয়মিত অভিযান এবং আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকলে এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব বলেও মনে করেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসএসসির এক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের এসএসসিতে তার কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় হতাশায় ভুগছে। তাই ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করে চেষ্টা করে ফল পরিবর্তন করে জিপিএ-৫ করার।
এরকম কয়েকটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, ফেসবুক কিংবা সামাজিক অ্যাপগুলোতে দুই ধরনের বিজ্ঞাপনদাতা পাওয়া যায়। একদল বিজ্ঞাপনদাতা কাজের আগে অগ্রিম টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। আরেক দল অগ্রিম টাকা না নিয়ে রেজাল্টের পর নেওয়ার কথা বলে দিনের দিনের পর আশায় রাখে। রেজাল্টের কিছুদিন আগে শিক্ষার্থীকে জানায়, তার ১ কিংবা ২ বিষয়ে ফেল আছে। তাই বাকি টাকা না দিলে ফলাফল পরিবর্তন সম্ভব নয়। এরা রেজাল্ট প্রকাশের আগেরদিন একটি ‘ফটোশপ করা ফলাফল’ শিক্ষার্থীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে গায়েব হয়ে যায়। পরদিন প্রকাশিত ফলের সঙ্গে ওই ফলের কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।
ফেসবুকে এরকম প্রতারণার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত আছে অনেকগুলো ফেসবুক আইডি, বিকাশ নম্বর ও মোবাইল নম্বর। এসব আইডি ও মোবাইল ফোন নম্বরের মালিকরা এক-একজনের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার করে টাকা আদায় করে থাকে।
এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে রবিবার (৬ মে)। এ কারণে এসএসসি’র বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে গেছে। শুরু হয়ে গেছে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল পরিবর্তন করে দেওয়ার বিজ্ঞাপন।
সবশেষ গত ১৬ এপ্রিল রাতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্ন ও ফলাফল পরিবর্তনের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে র্যাব। চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার থানার দামপাড়া থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-৭-এর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশেকুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্রেফতার দুইজন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এইচএসসির ভুয়া প্রশ্নপত্র বিতরণ ও ফলাফল পরিবর্তনের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’
আইন থাকলেও তা প্রয়োগের অভাব আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে অপরাধীদের মধ্যে একটা বিষয় আছে, সেটা হলো অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়া। এজন্য অপরাধের প্রবণতা আরও বাড়ে। আইনের সঠিক প্রয়োগ করে শাস্তির দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে পারলে এ ধরনের অপরাধ অনেকাংশে কমে আসবে।’
ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ ভুয়া। এদের ধরতে গোয়েন্দা সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। এরই মধ্যে অনেককেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আপনাদের কাছে কোনও তথ্য থাকলে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দিন, তারা ব্যবস্থা নেবে।’