দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন’ শিশুদের ভর্তি নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বাসস্থানের নিকটতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অটিস্টিক শিশুদের ভর্তি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে পরিপত্র জারি করা হচ্ছে।
শতভাগ ‘অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন’ শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) সালমা জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ (সোমবার) পরিপত্র জারি করা হবে। ন্যাশনাল স্ট্রাটেজিক প্ল্যান ফর নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার ২০১৬-২০২১ বাস্তবায়নে এই পরিপত্র জারি করছে মন্ত্রণালয়।’
এর আগে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবায় গত ১৯ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ একটি পরিপত্র জারি করেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, অটিজম ও স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা মোকাবিলায় জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে টেকসই সেবা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমাজকল্যাণ এবং মাহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করছে।’
পরিপত্রের নির্দেশনায় বলা আছে-
(১) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় অটিজম ও এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শতভাগ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।
(২) দেশের প্রতিটি উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও জনসাধারণকে ওরিয়েন্টেশন/ওয়ার্কশপের মাধ্যমে অটিজম ও এনডিডি বিষয় সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
(৩) অটিজম ও এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরবরাহ করা লিফলেট, ফেস্টুন, ডকুমেন্ট প্রদর্শন ও প্রচার করতে হবে।
(৪) সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দিবস উদযাপন করতে হবে।
(৫) মাধ্যমিক পর্যায়ের অটিজম ও এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে বিদ্যালয়ের কমপক্ষে দুজন শিক্ষককে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
(৬) মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিটি অটিজম ও এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দিতে হবে।
(৭) সব পর্যায়ের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অটিজম ও এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।
(৮) সব অটিজম ও এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিক্ষার্থীর কো-কারিকুলাম কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
(৯) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সব শিক্ষার্থীর মধ্যে সহমর্মিতা ও সংবেদনশীল মনোভাব গড়ে তোলার জন্য শ্রেণিকক্ষে উপদেশমূলক আলোচনা করতে হবে।
(১০) অটিজম ও এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে।
(১১) শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আচরণ সহযোগিতামূলক ও সংবেদনশীল করার জন্য অ্যাডভোকেসি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম নিতে হবে।
(১২) শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করা এবং বিশেষ চাহিদা, সীমাবন্ধতা, ও আচরণগত অসুবিধাগুলোকে রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
(১৩) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি দুই মাস পরপর শিক্ষার্থী ও অভিভাবক নিয়ে মতবিনিময় সভা আহ্বান করতে হবে।
(১৪) সেবা দিতে সংশ্লিষ্ট কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং এনজিওসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানসহ সমন্বয় রক্ষা করতে হবে।