হাত হারিয়ে রাজীবের মৃত্যু

বিটিআরসি ও স্বজন পরিবহন কে কতটা ক্ষতিপূরণ দেবে নির্ধারণ করবে কমিটি

রাজীব হোসেন। গত ৩ এপ্রিল রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় এক হাত বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ এপ্রিল মৃত্যু হয় তার। 

রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় হাত হারিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হাসান। এ দুর্ঘটনা ঘটার পরপরই এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজিবের দুই ভাইয়ের ভরণ-পোষণে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

কিন্তু, বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ সে আদেশ স্থগিত করে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে রাজীবের ভাইদের ক্ষতিপূরণ নির্ণয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে ওই কমিটির প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করেই ক্ষতিপূরণ পাবে রাজীবের দুই ভাই।  

রাজীব হাসানের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে গত ৮ মে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রাজীবের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

হাইকোর্টের ওই আদেশে অনুসারে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে এক মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্ধেক টাকা রাজীবের দুই ভাইকে পরিশোধ করতে বলা হয়। বাকি ৫০ লাখ টাকা দিতে আগামী ২৫ জুন আদেশ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, হাইকোর্ট তার আদেশে ওই এক কোটি টাকা রাখার জন্য মতিঝিলের সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় যৌথ অ্যাকাউন্ট খুলতে বলেন। ক্ষতিপূরণের ওই টাকা রাজীবের খালা জাহানারা বেগম ও রাজিবের গ্রামের বাড়ি দাসপাড়া এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের ছেলে কাস্টমস কর্মকর্তা ওমর ফারুকের যৌথ অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে বলেন। 

এ বিষয়ে বিআরটিসি’র আইনজীবী ব্যারিস্টার মুনিরুজ্জামানের দাবি, রাজিবের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে এটা আমরাও চাই। কিন্তু তা একটি নিয়মের মধ্যে হোক, সেটাই আমরা চেয়েছিলাম। তবে হাইকোর্ট তা না করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন। রাজীবের ঘটনায় কার দায় কতটুকু তা নির্ধারণ না করে হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিলেন। যার কারণে আমরা আপিলে এই আদেশ স্থগিত চেয়েছিলাম।

এদিকে বিআরটিসি ছাড়াও স্বজন পরিবহনের পক্ষ থেকেও হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। যার শুনানি নিয়ে আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত রাখেন। কিন্তু বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চকে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেন।  

বিআরটিসি’র আইনজীবী ব্যারিস্টার মুনিরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন ঠিকই। তবে এ ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করতে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করতে আপিল বিভাগ হাইকোর্টকে নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই কমিটি গঠনের দায়িত্ব পালন করবেন। 

ওই কমিটির কার্যক্রম কী হবে তা জানতে চাইলে মুনিরুজ্জামান বলেন, এই কমিটি রাজিবের হাত হারানোর ঘটনায় কোন বাসের দায়বদ্ধতা কম বা বেশি তা নিরূপণ করবে। সেক্ষেত্রে বিআরটিসি পরিবহন ও স্বজন পরিবহনের দায় কতটুকু তা প্রতিবেদনে উঠে আসবে। আপিল বিভাগ বলেছেন, এই কমিটির দ্বারা কোন পরিবহন কতটুকু দায়ী এবং সে জন্য তারা কতটুকু ক্ষতিপূরণ দেবেন সে বিষয়েও একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করবেন। এরপর সে প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চে ৩০ জুনের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর সেই প্রতিবেদন অনুসারে রাজীবের দুই ভাইয়ের জীবন মান নির্ধারণ করে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্ট পুণরায় আদেশ দেবেন।

তিনি বলেন, এখন এই কমিটিতে কারা কাজ করবে সে বিষয়টি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ওপর নির্ভর করছে। তবে সে কমিটিতে আমাদের (বিআরটিসি) রাখতে চাইলে কোনও আপত্তি করবো না। আদালত ডাকলে আমার আমাদের মতামত জানাতে প্রস্তুত রয়েছি।  আশা করছি ৩০ জুনের মধ্যে পরিবহন দুটির দায় নির্ধারণ করে রাজীবের দুই ভাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।