নিহত এ ব্যাংক কর্মকর্তার পরিবার ও স্বজনরা বলছেন, সুমন জাহিদ দুই বছর ধরেই হুমকির মুখে ছিলেন। কারণ তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার একজন সাক্ষী ছিলেন। হুমকিদাতারাই তাকে হত্যা করে রেললাইনের ওপর ফেলে গেছে বলে ধারণা তাদের। তবে পুলিশ জানিয়েছে, রেললাইন ঘেঁষেই সুমন জাহিদের লাশ পড়ে ছিল। ট্রেনের চাকা তার গলার ওপর দিয়ে গেছে। এটি আত্মহত্যা বলে তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি ট্রেন দুর্ঘটনায় সুমন জাহিদের মৃত্যু হতো, তবে তার পরনের ফতুয়া ও প্যান্ট ছেঁড়া বা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কিন্তু মৃত্যুর পরও তার গায়ের কাপড়ের কোনও ক্ষতি হয়নি। ট্রেন দুর্ঘটনায় যদি একটা মানুষের মৃত্যু হয় পরনের কাপড়ও ছিঁড়ে যাবে বা ফেটে যাবে। এমন কিছুই হয়নি।’
উত্তর শাজাহানপুরের ৩১২ নম্বর ভবনের সপ্তম তলায় স্ত্রী দ্রাকসিন্দা জবীন টুইসি ও দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতেন সুমন জাহিদ। ঘটনার পর বাসাটিতে গিয়ে দেখা গেছে, স্বামীর এমন মৃত্যুতে স্ত্রী টুইসি বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। ভবনের নিচে সুমন জাহিদের মরদেহ আনতেই শুরু হয় স্বজনদের মাতম।
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১৯৯৪ সালের গণআদালতের অন্যতম সাক্ষী ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা সুমন জাহিদ। এছাড়াও বর্তমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। যুক্তরাজ্যে পলাতক চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক আশরাফুজ্জামান উভয়কেই শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
সুমন জাহিদের ওপর হুমকির বিষয়ে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তার ওপর তেমন কোনও হুমকি ছিল না। তিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষী হওয়ার কারণে আমরা তাকে নিরাপত্তা দিয়ে আসছিলাম। তবে এতে আবার তিনি কিছুটা বিরক্তিবোধ করতেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুমন জাহিদের অর্থ সংক্রান্ত কিছু সমস্যা চলছিল। এছাড়াও পারিবারিক ও মানসিকভাবেও সমস্যায় ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ফেনীতে মামলা নিয়ে ঝামেলাও ছিল। আমরা ধারণা করছি, এসব কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’
সুমন জাহিদের বড় ছেলে শ্রয়ন জওহর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাবা প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটাহাটি করতেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি বাজারের ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে বের হন। ১০টার পর আমরা দুর্ঘটনার খবর পাই।’
সুমন জাহিদের পরিবারের পক্ষ থেকে এটিএম এমদাদুল হক বুলবুল বলেন, ‘সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই সুমন জাহিদকে টার্গেট করে হত্যাকারীরা। তার পিছু পিছু গিয়ে খিলগাঁও বাগিচা এলাকায় হিকমাহ আই হসপিটালের সামনে রেললাইনে পাশের একটি ঝুঁপড়িতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানেই তাকে গলা কেটে হত্যা করে রেলওয়ে লাইনে ফেলে দেওয়া হয়।’
ব্যাংকে চাকরির বিষয়ে পরিবারে পক্ষ থেকে জানানো হয়, সুমন জাহিদ দুই মাস আগে ফারমার্স ব্যাংকের চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন। আগামী ২ জুলাই বেসরকারি অন্য একটি ব্যাংকে তার যুক্ত হওয়ার কথাও ছিল। প্রায় ৩ বছর তিনি ফারমার্স ব্যাংকে ছিলেন। ব্যাংকটির অবস্থা খুব একটা ভালো না থাকায় তিনি সেখান থেকে অব্যাহতি দেন।
ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুমন জাহিদ আত্মহত্যা করেছেন বলে আমরা ধারণা করছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে আশপাশের লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।’
এ বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছে বলেও জানা তিনি।