রাবেয়া ও রোকাইয়ার জন্মদিন আজ

রাবেয়া ও রোকাইয়া (ফাইল ছবি)

জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া-রোকাইয়ার আজ (১৬ জুলাই)  দ্বিতীয় জন্মদিন। দারুণ উৎফুল্ল ও চঞ্চল মেয়ে দু’টির এই জন্মদিন ঘরোয়াভাবে পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন তাদের বাবা রফিকুল ইসলাম।

রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ আমার দুই মেয়ে দুই বছরে পা দিলো। আমরা ঘরোয়াভাবে ওদের জন্মদিন উদযাপন করবো। ওদের নতুন জামা পরাবো। ওদের মা পায়েস রান্না করবে। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়েরা বাড়িতে আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাবেয়া-রোকাইয়া এখন বেশ ভালোই আছে। হাঁটাচলা করতে পারে। আমি সেন স্যারের (ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন)  সঙ্গে কথা বলেছি। স্যার বলেছেন, হাঙ্গেরির চিকিৎসকেরা এলেই আবার তাদের অস্ত্রোপচার হবে।’ মেয়ে দু’টির জন্য দোয়া চান রফিকুল ইসলাম।

রাবেয়া-রোকাইয়ার মা তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘২০১৬ সালের ১৬ জুলাই। বিকাল চারটায় আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। অপারেশনের সময় আমার জ্ঞান ছিল। আমার পেট কাটার পরও বাচ্চা বের করতে পারছিলেন না চিকিৎসকেরা। পরে পেট আরও কেটে তারা বাচ্চা বের করেন। ওই সময় আমি উপস্থিত নার্স ও চিকিৎসকদের মুখ দেখে বুঝতে পারি, তারা কোনও এক কারণে অবাক। পরে যখন পাশে রাখা ট্রেতে চোখ যায়, দেখি সেখানে দু’টি বাচ্চা। আর তাদের মাথা জোড়া লাগানো।’

মায়ের কোলে রাবেয়া ও রোকাইয়া, পাশে বাবা (ফাইল ছবি)

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘রাবেয়া-রোকাইয়ার চলতি মাসের শেষদিকে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। এসময় তাদের অস্ত্রোপচার করা হবে। আজ তাদের জন্মদিন। তাদের বাবা-মা আমাকে ফোন করে জানিয়েছে। ওরা ভালো থাকুক, চাই।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার ব্যয়ভার নিয়েছেন বলেও জানান ডা. সামন্ত লাল সেন।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের আটলংকা গ্রামের স্কুলশিক্ষক রফিকুল ইসলাম-তাসলিমা দম্পতির তিন সন্তান। প্রথম সন্তানও মেয়ে। এরপর মাথা জোড়া লাগানো এই দুই মেয়ের জন্ম হয়। ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পাবনা শহরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি হলে সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই জমজের জন্ম হয়। গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাবেয়া-রোকাইয়াকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ২৭  ফেব্রুয়ারি সেখানে তাদের মাথায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে পরীক্ষামূলক অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা। এসময় তাদের রক্তনালী আলাদা করে তা সচল থাকে কিনা তা দেখা হয়।

বাংলাদেশি ও হাঙ্গেরির চিকিৎসকেরা মিলে ওই পরীক্ষামূলক অস্ত্রোপচার করেন। ওই সময় বাংলাদেশের ডা. সামন্ত লাল সেন, ডা. আবুল কালাম আজাদ এবং হাঙ্গেরির দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. স্টিফেন হিউডেক ও অ্যান্ডোস সুকেসহ মোট ২১ জন চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেন।