জরিমানার অর্থ পাবে ট্রাফিক পুলিশও




রাজধানীর সড়কে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ, ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীতে চলাচলকারী যানবাহনকে বিভিন্ন ত্রুটির কারণে করা জরিমানার ৩০ শতাংশ অর্থ ট্রাফিক পুলিশকে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। শিগগিরই তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গত ৬ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের বরাবর ডিএমপি কমিশনার এই চিঠি পাঠান। প্রধানমন্ত্রীও এই বিষয়ে সবাইকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া উল্লেখ করেন, ‘বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত নগরী ঢাকায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ট্রাফিকে চার হাজার সদস্য কাজ করেন। তারা ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। মহানগরীর আয়তন অনুযায়ী রাস্তাঘাট অপ্রতুল হওয়ায় যানজট একটি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নগরীতে যানবাহনের আধিক্য, শিল্প কারখানা, আবাসিক/বাণিজ্যিক ভবনগুলোর  নির্মাণ কাজ হতে নিঃসৃত ধুলাবালি ও যানবাহন কলকারখানা হতে উদগ্রিত ধোঁয়ার কারণে বায়ু দূষণ এবং সৃষ্ট শব্দ দূষণের ফলে স্বাভাবিকভাবে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন অত্যন্ত দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ 

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘এছাড়া, ঝড় বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেও ট্রাফিক পুলিশকে তার দায়িত্ব পালন করে যেতে হয়। ঢাকা মহানগরীতে প্রতি নিয়ত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায়, প্রতি দুই পালায় ডিউটি করতে হলেও বর্তমানে কিছু ক্ষেত্রে তিন পালায় ট্রাফিক পুলিশকে ডিউটি করতে হচ্ছে। তীব্র শব্দে সারাক্ষণ মানসিক চাপের মধ্যে দিনরাত কাজ করার কারণে এই বিভাগের সদস্যদের অনেকেই মানসিক বৈকল্য, বধিরতা, ক্যান্সার, যক্ষ্মা ও অপুষ্টিসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত। প্রতিনিয়ত চিকিৎসা বাবদ তাদের আর্থিক খরচের ফলে চিকিৎসা ব্যয় মিটিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ ও পারিবারিক প্রয়োজন মেটানো এই বিভাগের সদস্যদের জন্য অত্যন্ত দুরূহ।’

আছাদুজ্জামান মিয়া ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন সমস্যার কথাও চিঠিতে উল্লেখ করেন— ‘এই শহরের প্রাত্যহিক যান চলাচল নিশ্চিত করা, ট্রাফিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ আইনের প্রয়োগসহ ভিভিআইপি গমনাগমন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশ আস্থার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের এই কর্ম তৎপরতা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রশংসিত হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল কমিটি ফর ইন্টেলিজেন্স কোঅর্ডিনেশন (এনসিআইসি) সভায় ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের কাজে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে, এই বিভাগের মাধ্যমে আদায়কৃত মোট জরিমানার একটি অংশ প্রতিমাসে তাদের প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।। উল্লেখ্য যে, এই বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের অন্য কোনও আর্থিক খাত হতে অর্থ সংগ্রের প্রয়োজন পড়বে না।

চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত ট্রাফিক বিভাগের প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রতিমাসের আদায় করা জরিমানার ৩০ শতাংশ এই বিভাগে কর্মরত সদস্যদের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।’

কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ‘প্রসিকিউশনের মাধ্যমে পুলিশ যে অর্থ আদায় করে, সেটা থেকেই ট্রাফিক পুলিশকে জীবনযাপনের জন্য একটি অংশ দেওয়া যায়।’

শনিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘২০১৩-২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ডিএমপি ট্রাফিকের অভিযানে  মোট  ৩৯ লাখ ২৪ হাজার ৭০১  যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ থেকে মোট  ১৫৯ কোটি ৯১ লাখ ৭১ হাজার ৬৮০ টাকা সরকারি রাজস্বে দেওয়া হয়েছে।’ এছাড়া, চলমান ট্রাফিক সপ্তাহের ষষ্ঠ দিনে  মোট  ৫২ হাজার ৪১৭টি যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং দুই কোটি ৯২ লাখ  ৮০ হাজার ৪৬২ টাকা জরিমানা আদায় করা বলেও জানান তিনি।