তবে ২০০০ সালের প্রথম দিকেও এই অবস্থা ছিল না। গত শতাব্দীর শেষের দশকে গড়ে ওঠা ফ্যাশন হাউস বিশ্বরঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর পড়ার আগ্রহ থাকলেও দেশে তখন এমন কোনও প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। তাই নিজের আগ্রহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক শেষ করে বাংলাদেশি মোটিফ ও ফ্যাশন নিয়ে কাজ শুরু করেন। সেসময়ে যারা ফ্যাশন হাউসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তাদের সবারই অবস্থা একইরকম। এরপর চারুকলা থেকে পড়াশোনা করা অনেকেই সম্পৃক্ত হয়েছেন তার ডিজাইন টিমে। তবে এখন পরিস্থিতির বেশ বদল হয়েছে। ডিজাইন টিমের নেতৃত্বে চারুকলার স্নাতকরা থাকলেও এখন জুনিয়র ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন ডিজাইনের বেশ কয়েকজন আছে।
দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোতে ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে চারুকলার শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জায়গা করাসহ নিজেদের উদ্যোগে ফ্যাশন হাউস গড়ে তোলার এই প্রতিযোগিতা থাকলেও দেশের রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে কিন্তু অবস্থাটা একেবারেই উল্টো। এসব পোশাক কারখানায় এখন ফ্যাশন ডিজাইন থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার। ফলে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পেরে উঠছে না অন্যরা।
এ বিষয়ে বিজিএমই ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন টেকনোলজির ফ্যাশন ডিজাইন বিভাগের অধ্যাপক কাজী শামসুর রহমান বলেন, ২০০০ সাল থেকে ফ্যাশন ডিজাইনে স্নাতক সনদ দিয়ে আসছে বিজিএমই –এর ফ্যাশন ইনস্টিটিউট। ২০১৩ সালে যা পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়।গত ১৮ বছরে এই প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক ও ডিপ্লোমা নিয়ে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী বের হয়েছে। তারা এখন দেশের গার্মেন্টস শিল্পকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
কাজী শামসুর রহমান আরও বলেন, ‘তাদের এখান থেকে পাস করা একজন শিক্ষার্থীও বেকার নেই। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ে আছেন। এরা শুধুমাত্র ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবেই নয়, মার্চেন্ডাইজার এক্সপার্ট ও টেক্সটাইল এক্সপার্ট হিসেবেও কাজ করছেন।’ বায়িং হাউসগুলোর সিংহভাগ কর্মকর্তা তাদের প্রতিষ্ঠানের বলেই জানান কাজী শামসুর রহমান।
তিনি জানান, ২০০৩ থেকে শান্ত-মারিয়াম ফ্যাশন ডিজাইনে স্নাতক সনদ দিচ্ছে। এ পর্যন্ত গড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার শিক্ষার্থী বের হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ফ্যাশন ডিজাইনকে শুধুমাত্র পরিধান করার পোশাকের নকশা করার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে না ফেলার অনুরোধ জানান তিনি।
মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘এখানে ফ্যাশন থেকে পাস করা একজন শিক্ষার্থীর সামনে ডিজাইনার ছাড়াও টেক্সটাইল এক্সপার্ট, ফ্যাশন স্টাইলিস্ট, ফ্যাশন সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, বুটিকের মালিক, অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজার, শিক্ষক, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার, প্রডাকশন ম্যানেজার, কমপ্লায়েন্স ম্যানেজারের মতো অসংখ্য বিভাগে কাজ করার দুয়ার খুলে যায়। ফলে গার্মেন্টস সেক্টরসহ ফ্যাশন হাউস আর নিজস্ব বুটিক সবখানেই শান্ত-মারিয়ামের শিক্ষার্থীদের সদর্প বিচরণ।’
তিনি ই-কমার্সকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ই-কমার্সের ফলে অনেকেই চাকরির পেছনে না ছুটে নিজস্ব অনলাইনভিত্তিক বুটিকস খুলেছেন।’ তিনি জানান, শান্ত-মারিয়াম থেকে ফ্যাশন ডিজাইনে পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকারত্ব নেই বললেই চলে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজির শিক্ষক ও ডিপার্টমেন্ট কো-অর্ডিনেটর গোলাম রব্বানি জানান, ২০০৭ সাল থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর স্নাতক সনদ দিচ্ছে তার প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করে বেরিয়ে যাচ্ছেন। গত ১১ বছরে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করেছেন। এখন পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের অ্যালামনাই গঠিত না হওয়ায় পাস করে যাওয়া শিক্ষার্থীরা কে কী করছেন সে বিষয়ে কোনও তথ্য প্রতিষ্ঠানটির কাছে নেই। তবে বেশিরভাগই গার্মেন্টস ও বায়িং হাউসে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন।