প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, যানজট নিরসনে নির্মিত এই প্রকল্পের সুফল জনগণ আগামী বছর থেকেই পাবে বলে আশা করছে সরকার। আর ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এলাকায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মেট্রোরেল দৃশ্যমান হবে। উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক এক কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল পথে ৭৭০টি স্প্যান বসবে। পুরো পথে থাকবে ১৬টি স্টেশন। এ পথে ১৪ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। প্রতিটি ট্রেন এক হাজার ৬৯৬ জন যাত্রী বহন করতে পারবে। এরমধ্যে ৯৪২ জন বসে এবং ৭৫৪ জন দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন মেট্রোরেল ৩৭ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পৌঁছাবে। চার মিনিট পরপর প্রতিটি ট্রেন গন্তব্যে ছেড়ে যাবে। উভয় দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবে। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাইকা। পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয় করছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটি দুই ভাগে বাস্তবায়ন করার পেছনে যৌক্তিকতা হচ্ছে। প্রথম অংশে মেট্রোরেল চালুর পর যদি কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়ে, তবে দ্বিতীয় অংশে সেটি সংশোধন করে নেওয়া যাবে। তাছাড়া, বিমানবাহিনীর আপত্তিও প্রকল্পকে দুই ভাগে বাস্তবায়নের পেছনে কাজ করেছে।
জানা যায়, প্রকল্পটির প্রথম ধাপের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে যাত্রীদের তরফে নানা প্রশ্ন ছিল। সাধারণ যাত্রীদের আশঙ্কা—উত্তরা থেকে যাত্রা করে আগারগাঁও পৌঁছার পর সেখান থেকে রাজধানীর অন্য এলাকায় যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত যানবাহন পাওয়া যাবে কিনা। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ আগারগাঁও থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ফিডার সার্ভিসের মাধ্যমে যাত্রীদের পরিবহন সুবিধা দেবে। ফার্মগেট থেকে যাত্রীরা সহজেই বাস বা অন্যান্য সার্ভিসের মাধ্যমে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন। ফিডার সার্ভিসটি চালু থাকবে দ্বিতীয় ধাপে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল রুটে মেট্রোরেল চালু হওয়া পর্যন্ত।
জানতে চাইলে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফিডার সার্ভিসটি থাকবে সাময়িক। কেননা, উত্তরা ও মিরপুরের বাসিন্দারা মেট্রোরেলে আগারগাঁওয়ে আসার পর সেখানে পরিবহন সমস্যা দেখা দেবে। সেজন্য মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ফার্মগেট পর্যন্ত একটি ফিডার সার্ভিসের ব্যবস্থা নিয়েছে। পরের বছর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশটি চালু হলে এই সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাবে। এটা অবশ্যই মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের একটি ভালো উদ্যোগ।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্প এলাকায় দ্বিতল ভবনের সমান উচ্চতার ১৬টি স্টেশনের প্রতিটির নিচতলায় থাকবে টিকিট ঘর। প্রবেশপথ হবে স্বয়ংক্রিয়। এই স্টেশনগুলো হলো—উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশন। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশনের মধ্যে ২, ৩ ও ৪ নম্বর স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে।
এ বিষয়ে মেট্রোরেলের প্রকল্প পরিচালক আফতাব উদ্দিন তালুকদারের বক্তব্য জানতে বারবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে গণমাধ্যমের সঙ্গে তার কথা বলার বিষয়ে নিষেধ রয়েছে বলে প্রকল্পের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থায়ীয় কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে।
এছাড়া, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিকের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কয়েকবার প্রকল্প অফিসে গিয়েও তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।
‘বাঁচবে সময় বাঁচবে তেল, জ্যাম কমাবে মেট্রোরেল’—এই স্লোগান নিয়ে শুরু হওয়া দেশের প্রথম মেট্রোরেল বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে। ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর এ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় সরকার। প্রাথমিক মেয়াদকাল ছিল ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। ২০১৬ সালের ২৬ জুন এর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্রুত কাজ করায় নির্ধারিত সময়ের প্রায় চার বছর আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।