আবারও ফেসবুকে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেওয়ার প্রলোভন





১১১

ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাসহ যেকোনও পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে পোস্ট দেওয়া বন্ধ হয়নি। গত কয়েক বছর ধরে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে নিয়মিত এমন পোস্ট দিয়ে যাচ্ছে প্রতারক চক্র। সরকার ও প্রশাসন প্রশ্নফাঁস রুখতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় গত এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার খবর জানা যায়নি। তবে আগামী ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য দেশব্যাপী মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র টাকার বিনিময়ে দেওয়ার প্রলোভন দেওয়া হয়েছে ফেসবুকে।
মাহফুজুর রহমান রোটন নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন গ্রুপে মেডিক্যালের প্রশ্নপত্র দেওয়ার প্রোলভন দিয়ে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। গত দুদিন ধরে এই পোস্টটি ছড়িয়েছে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে। মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র টাকার বিনিময়ে নেওয়ার জন্য তাদের নিজস্ব ফেসবুক গ্রুপ (Govt.Dental and Medical College Admission Aid) জয়েন করার জন্য আগ্রহীদের আহ্বান জানিয়েছে মাহফুজুর রহমান রোটন। ফেসবুকে সে নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে দাবি করেছে। কিন্তু অনুসন্ধানে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
২২২

এছাড়া ওই পোস্টের কার্টেসিতে মাহমুদ হাসান মীরন নামে একজনের নাম বলা হয়েছে। ওই পোস্টে দাবি করা হয়েছে, মাহমুদ হাসান মীরন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী, যিনি বিভাগটিতে ভর্তি হয়েছেন ২০১৩ সালে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল ছাত্রলীগ শাখার একজন সক্রিয় কর্মী।
ফেসবুকের ওই গ্রুপটি ঘেঁটে দেখা গেছে, গ্রুপটিতে পাঁচ শতাধিক সদস্য রয়েছে এবং ওই গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে রয়েছে রোটন ও মীরন।
মাহমুদ হাসান মীরনের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে মাহফুজুর রহমান রোটনের পোস্টটির শুরু এভাবে—
‘সময়টা ২০১৩ সাল। এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট পাবলিশ হলো। কলেজ লাইফে যদিও খুব একটা খারাপ স্টুডেন্ট ছিলাম না এবং এইচএসসি এক্সামও যথেষ্ট ভালো দিয়েছি,তবুও রেজাল্ট আসলো মাত্র ৪.৫০। রেজাল্ট দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। সবচেয়ে দুটো ব্যাপার বেশি খারাপ লেগেছিলো।’ এরপর নানা কথাবার্তার পর লিখেছে—
‘(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের) হল পলিটিক্সে বেশ ভালোই জড়িয়ে গেলাম। হল কমিটি দিলে সেকেন্ড ইয়ারেই একটা পূর্ণাঙ্গ সম্পাদক পোস্ট পাই। পলিটিকসের খাতিরে বিভিন্ন ধরনের ভাইদের সঙ্গে মিশতে লাগলাম। ডেইলি মধুর ক্যান্টিনে সোহাগ ভাই, নাজমুল ভাই আসতেন। আমরা প্রতিটা হল থেকেই ভাইদের প্রটোকল দিতে যেতাম। সোহাগ, নাজমুল ভাইদের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ ছাত্রলীগ, বুয়েট ছাত্রলীগ, ঢামেক ছাত্রলীগ আসতো। মধুতে আড্ডা দিতে দিতেই সবার সঙ্গে কমবেশি সখ্যতা হয়ে যায়। এরপর একটা পর্যায়ে আমিও আমার ক্যাম্পাসের এক বড় ভাইয়ের হাত ধরে এডমিশন সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়ি।’ এ ছাড়া নানা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মেডিক্যালে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন দেওয়ার ফাঁদ পেতেছে।
৩৩৩

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান মীরন নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রশ্নপত্র দেওয়ার প্রোলোভন দিচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তথ্য প্রমাণ ছাড়া কাউকে তো কিছু বলা যাবে না। এই ছেলেটি আসলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কিনা, অথবা সে এ ধরনের পোস্ট দিয়েছে কিনা অথবা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।’
এদিকে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগে মাহমুদ হাসান মীরন নামে কেউ পড়ে কিনা জানতে বিভাগটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে বিভাগটির অন্য একজন শিক্ষক নিশ্চিত করেছেন, মাহমুদ হাসান মীরন নামে বিভাগে কেউ পড়ে না। বিভাগের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও মাহমুদ হাসান মীরন নামে কোনও শিক্ষার্থীকে চিনতে পারেনি।
৫৫৫

মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কোনোভাবেই ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা নেই উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেডিক্যালের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার শূন্য শতাংশও সম্ভাবনা নেই। আমরা শতভাগ নিশ্চিত ফাঁস হবে না। আর ফাঁস না হওয়ার জন্য যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সব ব্যবস্থা ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছি। গোয়েন্দা পুলিশসহ সব পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক আবস্থায় রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলবো, এ ধরনের প্রলোভনে না পড়ার জন্য। কারণ, একটি মহল অর্থ আত্মসাৎ করতে নানা কৌশল করে রাখে। প্রশ্নপত্র দিতে পারবে এমন দাবি করে যদি কেউ ফেসবুকে অথবা অন্য কোনও মাধ্যমে জানায় তাহলে আমরা প্রশাসনকে জানাবো। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’