মাদক এখন দুষ্প্রাপ্য: র‌্যাব ডিজি

গণমাধ্যমে ব্রিফ করছেন র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদগত পাঁচ মাসে টানা অভিযানের কারণে মাদক এখন দুষ্প্রাপ্য। প্রকাশ্যে মাদক বেচাকেনা নেই। মাদক ব্যবসায়ীরা কৌশল ও রুট পরিবর্তন করেছে। একই সঙ্গে মাদকসেবীরাও মাদক ছেড়ে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ।

শুক্রবার (১২ অক্টোবর) মাদক ব্যবসায়ীর গুলিতে আহত  তিন র‌্যাবের সদস্যকে ঢাকার সিএমএইচে দেখতে এতে এসব কথা বলেন তিনি।

র‌্যাবের মহাপরিচালক জানান, তিন জনকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। একজনকে চট্টগ্রাম সিএমএইচ-এ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে শনিবার (১৩ অক্টোবর) হেলিকপ্টারে করে তাকেও ঢাকায় নিয়ে আসা হবে।

এর আগে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে এক নম্বর রেল গেটের পাশে একটি চেকপোস্টে দায়িত্বরত র‌্যাব সদস্যদের গুলি করে অসীম রায় বাবু (২৮) নামে এক ‘মাদক ব্যবসায়ী’। তার গুলিতে আহত  হন চার জন র‌্যাব সদস্য। পরবর্তীতে র‌্যাবের গুলিতে মারা যায় অসীম।  গত ১১ অক্টোবর রাতে এ ঘটনা ঘটে।

আহত র‌্যাব সদস্যরা হলেন— মেজর মেহেদী হাসান, স্কোয়াড্রন লিডার সাফায়েত জামিল ফাহিম, ল্যান্স করপোরাল আরিফ ও শহীদ। স্কোয়াড্রন লিডার সাফায়েত জামিল ফাহিম ছাড়া বাকি তিন জনকে শুক্রবার ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) রাতে সংঘটিত ঘটনা সম্পর্কে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘একটি চেক পোস্ট ছিল। একটি নীল রঙের গাড়ি দ্রুত বেগে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে দেখে দায়িত্বরতরা গাড়িটি থামানোর সিগন্যাল দেয়। তখন গাড়ি থেকে নেমে একজন এলোপাতাড়ি গুলি করে। ফলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দুজন অফিসার গুলিবিদ্ধ হন। তখন সঙ্গে যারা ছিল, তারা পাল্টা গুলিবর্ষণ করলে ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরও সে তিন রাউন্ড গুলি করে। এরমধ্যে দুটি গুলি আমাদের দুজন সৈনিকের শরীরে বিদ্ধ হয়েছে। পরবর্তী সময়ে গাড়িটা সার্চ করে ১২ হাজার পিস ইয়াবা পেয়েছি। একটি বিদেশি পিস্তল, চারটি মোবাইল ফোন, ম্যাগাজিন ও গুলি পাওয়া গেছে। কিছু ফায়ার কার্তুজও পাওয়া যায়।’

র‌্যাবের ডিজি বলেন, ‘র‌্যাবকে লক্ষ্য করে যে ব্যক্তি গুলি করছিল, সে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কিছুক্ষণ পর মারা যায়। গাড়িতে আরও লোক ছিল। গোলাগুলি চলার সময় তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা র‌্যাবের তিন সদস্যকে ঢাকায় নিয়ে এসেছি। যিনি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন, তাকে চট্টগ্রামেই রাখা হয়েছে। পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রয়োজন মনে করলে আগামীকাল (শনিবার) তাকেও আমরা হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসবো।’

গত পাঁচ মাসের অভিযানে এটা বড় দুর্ঘটনা বলে দাবি করেন র‌্যাব মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ মাস ধরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। এই প্রথম একটি বড় দুর্ঘটনা হলো। দেশ মাদকমুক্ত করতে যে প্রত্যয় নিয়ে আমাদের অফিসাররা কাজ করছেন এর মধ্যে এবারই প্রথম আমরা এ ধরনের মারাত্মক ক্যাজুয়ালিটির সম্মুখীন হয়েছি। আমরা মোটেই হতাশ নই।আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবো। দেশবাসীর কাছে  অনুরোধ করবো— যারা আহত হয়েছেন, তাদের জন্য দোয়া করবেন, যাতে তারা দ্রুত ফিরে আসতে পারেন।  আমাদের যে যুদ্ধ সে যুদ্ধ যেন চালিয়ে যেতে পারি। তাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে পারি।’

এ দুর্ঘটনাটি মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে আরও বেশি বেগবান করবে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘এ ঘটনা মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধকে আরও বেশি বেগবান করবে। আপনাো জোনেন, গত পাঁচ মাসের অভিযানে আমরা প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকার ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক উদ্ধার করেছি। প্রায় ১৭ হাজার মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ফলে যেটা হয়েছে দেশে এখন মাদকের প্রকোপ অনেক কম। প্রকাশ্যে মাদক  বেচাকেনার যে অভিযোগগুলো পাওয়া যেত, এখন আর নাই। কক্সবাজারকেন্দ্রিক মাদক ব্যবসায়ীদের শক্ত হাতে দমন করার পরা  তারা রুট পরিবর্তন করেছে, কৌশল পরিবর্তন করেছে। ইভেন যারা মাদক গ্রহণ করে তারা অনেকে মাদক ছেড়ে দিয়েছে।অনেকে আবার ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। রিহ্যাবে ভর্তি হয়েছে। মাদক এখন অনেকটা দুষ্প্রাপ্য। এক সময়ের ১০০ টাকার মাদকএখন ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হয়। আমাদের এ অভিযানের একটা প্রভাব পড়েছে। যতদিন প্রয়োজন পড়ে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।