মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে বৈঠকি শুরু হয়। বৈঠকিতে অংশ নেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাওছার, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক কাজী মারুফুল ইসলাম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আশিষ সৈকত এবং বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কিন্তু একদিন অথবা দুই দিনের ব্যাপার নয়। প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ দিনের ব্যাপার। নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয় আরও আগে। কয়েকমাস বাদেই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে আশা করছি, নির্বাচন কমিশনই তা আয়োজন করবে।’
আওয়ামী লীগের এ নেতা আরও বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর থেকেই আগামী একাদশ নির্বাচনের ঘন্টা বাজতে শুরু করেছে। বর্তমানে ঢাকা শহরে নির্বাচনি প্রচারণা চোখে পড়ছে না। তবে গ্রাম অঞ্চলে ইতোমধ্যে প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে।’
এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন বানচালে বিএনপি আগুন সন্ত্রাস কর্মকাণ্ড চালিয়েছে,এ কথা গোটা জাতি জানে। এরপর এই সরকারের অধীনেই স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেসব নির্বাচনে কোনও দলতো একটাতেও বয়কট করেনি। বরং বিএনপি না জিততে পারলে বলেছে কারচুপি হয়েছে, অন্যদিকে যখন জিতেছে তখন বলেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।’
কিন্তু দলটির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা-হামলা ও আটকের মাধ্যমে রাজনৈতিক নিপীড়ন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বর্তমান সরকারি দল অবৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এই অবৈধ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। বিএনপি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, দলটি গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে আছে।’
মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ আরও বলেন, ‘ইসলামী শক্তিগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, একত্রিত হয় তাহলে ইসলামী শক্তি আরও শক্তিশালী হবে। ইসলামী ঐক্যজোটসহ ইসলামী দলগুলো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তারাও নির্বাচন চায়।’
তিনি বলেন, ‘নিজের মধ্যে যদি তেজ-তুফান না থাকে তাহলে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। আমরা এখন পর্যন্ত এককভাবে আছি, এছাড়া যারা ইসলামী দল, যারা কাজ করে যাচ্ছে তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই আমরা কাজ করতে চাই। এগিয়ে যেতে চাই।’
অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘সময় যত এগিয়ে আসছে নির্বাচনি ঘণ্টা বা নির্বাচনি আমেজ প্রসারিত হচ্ছে। একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে তিনটি বিষয় কাজ করে। প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও নাগরিক। প্রশাসনিক পর্যায়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে গিয়ে যে লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার তা এখন পর্যন্ত কতখানি সংগ্রহ করতে পেরেছে কমিশন, যেমন- ইলিক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন অর্থ্যাৎ ইভিএম। এখন পর্যন্ত এটার ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে কিনা। যদিও এর ব্যবহার নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। ভোটকেন্দ্র এখনও প্রস্তুত করতে পেরেছে কিনা। এছাড়া এর যে পরিমাণ জনবল তা নিয়ে কাজ করা বাকি রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কমিশনের জনবলকে প্রস্তুত করা, তাদেরকে দক্ষ করা সময়মতো সম্ভব হবে কিনা। এছাড়া নির্বাচনি আচরণবিধি, প্রচার ও প্রসারিত করার প্রাথমিক প্রস্তুতি কিন্তু এখনও হয়নি। মানুষের মধ্যে এখনও সংশয় রয়েছে।’
আশিষ সৈকত বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটি দল তাদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে এই নির্বাচনি আমেজ আরও বেশি তৈরি হবে, নির্বাচন মুখর হয়ে ওঠবে। তখন কাজ বাড়বে নির্বাচন কমিশনের। তাদের অনেক দায়িত্ব।’
আলোচনার বিষয়কে সময়োপযোগী উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। নির্বাচনের ঘন্টা বাজতে শুরু করেছে। এখন কোন দল কোন প্রার্থীকে নমিনেশন দেবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।’
মাঠের অবস্থা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মাঠে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা বেশ ভালো অবস্থায় আছেন, তারা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ব্যানার ফেস্টুন লাগানো, গ্রামে-গঞ্জে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিএনপিকে এখনও দেশবাসী প্রধান বিরোধী দল মনে করে। কিন্তু তারা সেই সূত্রে এখনও মাঠে নামতে পারছে না।’
মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় বৈঠকিটি রাজধানীর শুক্রাবাদের বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিও থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।