অবশেষে ‘স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি’ শিক্ষকরা আসছেন বেতনকাঠামোর আওতায়

 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বঞ্চিত প্রায় ১৮ হাজার ‘স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার ৫০ হাজারেরও বেশি শিক্ষককে এবার পর্যায়ক্রমে বেতনকাঠামোর আওতায় আনা হচ্ছে। সরকারের বাজেট বরাদ্দের ভারসাম্য রক্ষায় একসঙ্গে সব শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি যুক্ত করার শর্তে ‘স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসা স্থাপন, স্বীকৃতি, পরিচালনা, জনবল ও বেতন কাঠামো সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৮’তে সম্মতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগে এই সম্মতিপত্র পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে এই লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ চারটি শর্তও জুড়ে দেয়।

অর্থ বিভাগের জুড়ে দেওয়া চারটি শর্ত হলো—প্রথমত, সরকারের বাজেট বরাদ্দের ভারসাম্য রক্ষায় একসঙ্গে সব শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেওয়া, দ্বিতীয়ত, প্রচলিত প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের কাজের ধরন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তেমন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তৃতীয়ত, উপজেলা বা থানাভিত্তিক শূন্যপদ অনুযায়ী কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে একই উপজেলা বা থানার উত্তীর্ণ মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থীদের দিয়ে শূন্যপদ পুরণ করতে হবে। ‍চতুর্থ শর্ত অনুযায়ী, বর্তমানে অনুমোদিত মাদ্রাসার অবস্থান কাছাকাছি হলে একীভূত করার বিষয়টি নীতিমালায় থাকতে হবে।

এরআগে, গত ২ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ নীতিমালাটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠায়। এরপর বৃহস্পতিবার সম্পতিপত্র দেয় অর্থ বিভাগ।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব কবির আল আসাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অর্থ বিভাগের শর্ত প্রস্তাবিত নীতিমালায় যুক্ত করা হবে। যতদ্রুত সম্ভব নীতিমালা চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।’

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে জানা গেছে, ৩০ বছর ধরে বঞ্চিত দেশের স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি প্রায় ১৮ হাজার মাদ্রাসার ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষকের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য নীতিমালা প্রস্তুত করা হয়। নীতিমালা প্রস্তুত করে অভিতের জন্য সম্প্রতি অর্থ বিভাগের পাঠানো হলে অর্থ বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন চায়। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে দ্বিতীয় দফা অভিমতের জন্য পাঠালে অর্থ বিভাগ চারটি বিষয় যোগ করার শর্তে সম্মতি দেয়। 

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের একই পরিপত্র অনুযায়ী হয় বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সমমানের নিবন্ধিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা। শুরু থেকেই ৫০০ টাকা করে  ভাতা পাওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি হলেও ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষককরা বঞ্চিত হন। শুধু তাই নয়, একই শিক্ষা ব্যবস্থায় দাখিল মাদ্রাসার সঙ্গে সংযুক্ত ইবতেদায়ি শিক্ষকরা ৯ হাজার ৯১৮ বেতন পেলেও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক পাচ্ছেন আড়াই হাজার টাকা ও সহকারী শিক্ষকরা পাচ্ছেন মাত্র দুই হাজার ৩০০ টাকা।

বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কাজী রুহুল আমিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৬ সালে অনুদান বাড়িয়ে এমপিওভুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকদের ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং সহকারী শিক্ষকদের দুই হাজার ৩০০ টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত নীতিমালায় সম্মতি দেওয়ায় আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

কাজী রুহুল আমিন চৌধুরী জানান, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে অনুদান পাওয়া এবং অনুদানের জন্য আবেদন জানানো প্রায় ১৮ হাজার স্বতন্ত্র মাদ্রাসায় ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত।’