আন্তর্জাতিক হবে সৈয়দপুর বিমানবন্দর

ff800e3dcc960c30394f09cfff130619-5b532aa2abafa

অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহৃত সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করতে ফিজিবল স্টাডির কাজ শুরু করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ফিজিবল স্টাডি শেষে বিমানবন্দরটি আধুনিকায়নের কাজ শুরু করবে বেবিচক।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশের চারটি এয়ারলাইনস এই বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহন করছে। চাহিদা বৃদ্ধির কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বিমানবন্দরটিকে আঞ্চলিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করার ঘোষণা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেশি দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করতে বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রনালয়। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করতে ফিজিবল স্টাডির কাজ করেছে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান। ডিসেম্বর মাসে ফিজিবল স্টাডি শেষে হলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের কাজ শুরু করবে বেবিচক। বিম্নবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করতে প্রায় ৪ বছরের মতো সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বেবিচক। এখন অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের চাপ সামলাতে সম্প্রসারণের কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, বিমানবন্দরটি সম্প্রসারণ করার জন্য ৮৫২ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা বেসামরিক বিমানপরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের। এরমধ্যে সৈয়দপুরে ৫৩৫ একর এবং দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলায় ৩১৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। অধিগ্রহণকৃত জমিগুলো পড়েছে সৈয়দপুর পৌরসভা, বাঙ্গালিপুর ইউনিয়ন এবং পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচণ্ডি ইউনিয়নের মধ্যে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানান, সৈয়দপুর বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ে ১৭ নভেম্বর বিকালে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মহিবুল হক উপস্থিত ছিলেন।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ কাজ শুরুর আগে বিমানবন্দর সম্প্রসারণের জন্য নতুন টার্মিনাল ভবন এবং দুটি বিমান পার্কিং স্পেস তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমান বিমানবন্দরের ৬ হাজার ফিট রানওয়ে বর্ধিত করে  ১২ হাজার ফিট করা হবে। নতুন করে ট্যাক্সিওয়ে, এ্যাপ্রোণ, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল বিল্ডিং, কার্গো টার্মিনাল, বিল্ডিং কন্ট্রোল টাওয়ার, পাওয়ার হাউজ, পাম্প হাউজ, ফায়ার স্টেশন, প্রশাসনিক ভবন, অপারেশনাল ভবন, ভিআইপি ও ভিভিআইপি লাউঞ্জ, আবাসিক ভবন নির্মাণ, হ্যাঙ্গার, ভিডিওআর, ডিএমই, এনডিবি, আইএলএস, সিসিআর, এজিএল, রাডার স্টেশন, ওয়াটার সাপ্লাই ও ড্রেনেজ সিস্টেম, ওভারহেড ওয়াটার ট্যাংক, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, এমটি ভবন,কারপার্ক, এ্যাপ্রোচ সড়ক, ইন্টারনাল সড়ক এবং পেরিফেরাল পেট্রোল সড়ক নির্মাণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমডোর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মূলত আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহৃত হবে। তবে যে কোনও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার সক্ষমতা বিমানবন্দরের থাকবে। বর্তমানে বিমানবন্দরের নির্মাণের জন্য ফিজিবল স্টাডির কাজ চলছে। ফিজিবল স্টাডির তথ্যের ভিত্তিতে সরকারের অনুমোদন দিয়ে নির্মাণ কাজের প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে এয়ার কমডোর মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ সময় সাপেক্ষ বিষয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ রুটেও প্রতিনিয়ত যাত্রী চাপ বাড়ছে। এ কারণে বিমানবন্দর সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটি নতুন টার্মিনাল হবে যেখানে ৩০০ জনের বেশি যাত্রী ধারণে সক্ষম হবে। ২টি বিমান এখান সেখানে পার্কি করতে পারে, সেটি ৪টিতে উন্নীত করা হবে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ কাজ শেষ হলে তখন এ অংশ অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।’

প্রসঙ্গত, দেশে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে ৩টি। এগুলো হলো- ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এছাড়া শুধু অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে- কক্সবাজার বিমানবন্দর, যশোর বিমানবন্দর, বরিশাল বিমানবন্দর, রাজশাহীর শাহ মাখদুম বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর। এরমধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের কাজ চলমান রয়েছে।