নির্বাচনের আগে ও পরে সহিংসতা না হওয়ার গ্যারান্টি দাবি

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সংবাদ সম্মেলন

নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা না হওয়ার গ্যারান্টি দিতে হবে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান।

বুধবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্বত্য তিন জেলার আদিবাসী ভোটারদের অবাধ অংশগ্রহণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে পার্বত্য তিন জেলাসহ সারাদেশে এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সাধারণ নাগরিক ও ভোটাররা নিশঙ্কচিত্তে, নিরাপদে ও স্বাধীনভাবে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। ভোটের আগে, ভোটের দিন ও ভোটের পরে কোনও রূপ নিপীড়ন নির্যাতন ও হয়রানির শিকার যেন না হয়, তার গ্যারান্টি দিতে হবে নির্বাচন কমিশন ও রাষ্ট্রকে। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার, পাহাড়ের মানুষগুলোর স্বাভাবিক জীবনযাপন, স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও মত প্রকাশের অধিকার, নির্ভযয়ে স্ব স্ব ধর্ম পালনের যে নিশ্চয়তা থাকবে, সে বিষয়ে সরকারি দলসহ সব রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বক্তব্য শুনতে চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে গৌতম দেওয়ান বলেন, ‘বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এবছর আগস্ট পর্যন্ত পার্বত্য জেলায় কমপক্ষে ৩৪ জন হত্যার শিকার হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী। এছাড়া, এ সময় অপহরণ, গুম, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও সংঘটিত হয়েছে ২০টির অধিক। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে অপরাধ প্রতিরোধে কিংবা তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করা এবং আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি দেওয়ারও কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ে নাই।’

তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি রাজনৈতিক কর্মী মিঠুন চাকমাকে হত্যার মধ্যদিয়ে পাহাড়ে নতুন বছর শুরু হয়েছিল। এমন ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের দিক থেকে এর প্রতিকারে কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর যে শান্তির লক্ষ্যে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল, সেই চুক্তি বিগত ২১ বছরেও পূর্ণ বাস্তবায়ন না করতে পারার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান পরিস্থিতি ক্রমাবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। গত ২ ডিসেম্বর ছিল পার্বত্য চুক্তির ২১ বছর পূ্তি। চুক্তি সম্পাদনকারী দল আওয়ামী লীগ একনাগাড়ে ১০ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে সরকার পরিচালনা করার পরও চুক্তির প্রধান কয়েকটি ধারা এখনও অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। তাই স্বাভাবিকভাবে জনগণের মনে প্রশ্ন জাগে— পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে সরকারের যে নির্বাচনি অঙ্গীকার ছিল, তা কবে সম্পন্ন হবে?’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, মানবাধিকার ও উন্নয়ন কর্মী খুশী কবির, ব্যারিস্টার সারা হোসেন এবং শামসুল হুদা।