‘বঙ্গবন্ধুকে আলাদা করে বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা যাবে না’

 

 

অধ্যাপক আব্দুল মান্নানবিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে আলাদা করে বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা যাবে না।
সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) প্রধান ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার ২৩ বছরের সংগ্রাম জীবনের চার হাজার ৪০০ দিন জেলে ছিলেন, মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন, তাকে আলাদা করে কখনও বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা যাবে না। আমি যতই আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করি না কেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আলাদা করে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা যাবে না। এই সত্য কথাটি আমরা উপলব্ধি করি, নতুন প্রজন্মকেও উপলব্ধি করতে হবে।’
আব্দুল মান্নান আরও বলেন, “২৫ মার্চ রাত থেকেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা শুরু। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় চলেছে এই হত্যাযজ্ঞ। বর্তমান প্রজন্মের এগুলো জানার দরকার আছে, বোঝার দরকার আছে, শেখার দরকার আছে। কারণ, যে দেশের মানুষ তার ইতিহাস জানে না, তাদের আমরা ‘শেকরহীন’ বলি; তারা হলো নদীতে ভাসমান খড়কুটোর মতো, একদিকে ভাসছে আরেক দিক দিয়ে চলে যাচ্ছে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন দুটি বিষয় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক করেছে— বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস। আমি সারাদিন বললেও একাত্তরের সেই দিনগুলোতে নিয়ে যেতে পারবো না! বর্তমান প্রজন্ম ইতিহাস জানার দরকার আছে।’
অধ্যাপক রফিকুল ইসলামএকটি গবেষণাকে উদ্ধৃতি করে অধ্যাপক মান্নান বলেন, “২৫ মার্চের রাত থেকে ১৪ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত সারাদেশে ৯৯১ জন বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। এর মধ্যে সাংবাদিক ১৩ জন, চিকিৎসক ৪৯ জন, আইনজীবী ৪২ জন, অন্যান্য ছিলেন ১৬ জন। ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ কেমন ছিল বোঝানো মুশকিল!”
এ সময় ড. কামাল হোসেনের দিকে ইঙ্গিত করে অধ্যাপক মান্নান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ছায়ায় বেড়ে ওঠা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আছেন— আমি তার নাম বলতে চাই না— তিনি তার ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে বলেছেন, তারা ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চালু থাকবে। তামাশা করার তো একটা সময় আছে! এটা ডিসেম্বর মাস, আপনি প্রেসিডেন্ট হোন, যা-ই হোন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তামাশা করবেন না। যেই দলের হয়ে নির্বাচন করছেন, সেখানে ২২ জন আছে যারা ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল বা তাদের বাবা-দাদারা হত্যা করেছিল। সাতজন আছে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সন্তান। তাদের নিয়ে আপনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন!’
জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, “পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর টার্গেট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ইপিআর হেড কোয়ার্টারস, বঙ্গবন্ধু ভবন, বিভিন্ন সংবাদপত্রের অফিস। এর আগে পাকিস্তানের কয়েকজন রাজনীতিবিদ জেনারেল টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করেন, সেখানে তাদের মধ্যে একটি পরিকল্পনা করা হয় যে কীভাবে বাঙালিদের শায়েস্তা করা যায়। এর পরপরই আমরা দেখি রাজাকার বাহিনী গঠিত হচ্ছে, আল বদর, আল শামস বাহিনী গঠিত হচ্ছে। শান্তি কমিটির নামে অশান্তি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এখানে যারা আসতো তাদের মধ্যে কে বুদ্ধিজীবী কে বুদ্ধিজীবী না— এটা কেউ জানতো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ছিলেন, তাদের এসব কাজে সহায়তা করতেন। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধরে যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড চলেছে, এই বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষক, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী। অর্থ্যাৎ আমাদের সমাজের যারা মাথা তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হলো। পূর্ব বাংলা বা বাংলাদেশকে যদি দাবিয়ে রাখতে হয় তাহলে এই লোকগুলোকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।’
অনুষ্ঠানের শুরুতেই শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর পরিবেশন করা হয় সমবেত জাতীয় সংগীত। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউল্যাবের উপাচার্য প্রফেসর এইচ এম জহিরুল হক। আলোচনা শেষে তিনি প্রধান অতিথির হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন। এরপর ইউল্যাব সাংস্কৃতিক সংসদের সংগীত পরিবেশন মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউল্যাবের বোর্ড অব ট্রাস্টির বিশেষ উপদেষ্টা প্রফেসর ইমরান রহমান, উপ উপাচার্য সামশাদ মর্তুজা, ট্রেজারার মিলন কুমার ভট্টাচার্য এবং রেজিস্ট্রার আখতার আহমেদসহ ইউল্যাবের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা।