আমি এখন হাইস্কুলে পড়ছি : জেবা তাসনিয়া

জেবা তাসনিয়া

আমি তো পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ ফাইভ পেয়েছি। এবার আমি হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছি। আমার স্কুলের নাম উন্নতিপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। আমার নতুন স্কুলে ভর্তি রোল ২০।

আজ রবিবার চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ শেষে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন ভাসকুলার ম্যালফরমেশন রোগে আক্রান্ত জেবা তাসনিয়া। ২০১৭ সাল থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসকদের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। এর আগে ২০১৭ সালে একবার এবং ২০১৮ সালে আরও একবার অস্ত্রোপচার হয় তার।

তার অবস্থা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত  লাল সেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজকে ওরা এসেছিল। তখন আমার সঙ্গে দেখা হয়েছে। ওর মুখের ফোলাটা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। ওর আরেকটা  অস্ত্রোপচার লাগবে। তার অবস্থা ভালোর দিকে।’

জেবা তাসনিয়ার বাবা হাসান হাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ওর পড়াশোনার ক্ষতি যেন না হয় তাই তাকে হাসপাতালে এখন ভর্তি করছে না। আজ কালাম স্যার (ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ) ওকে দেখল। উনি খুশি যে ও অনেকটা ইমপ্রুভ করেছে। আজকে স্যার নিয়ে আসতে বলেছিল, দেখার জন্য, মার্চের ১৮ তারিখে ভর্তি। এই সময়টা সে বাড়িতে থাকবে। ওর এখন কোনও ওষুধ নেই। ওর যে ইনজেকশন চলছিল সেটাও বন্ধ আছে। গতকাল রাতে ঢাকায় এসেছি। এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছি। আজ রাতে বাড়ি ফিরে যাবো।

তিনি বলেন, জেবা এবার হাইস্কুলে ভর্তি হলো। ও সিক্সে ভর্তি হয়েছে। সপ্তাহখানেক হলো ও সেখানে ক্লাস করছে। তাকে ঢামেকে ভর্তি এবং চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছেন সাবেক সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, এখনও সবসময় ওর খোঁজখবর নেন তিনি। উনার মতো মানুষের কাছে তো বারবার ফোনও দেওয়া যায় না। তারপরও আমরা ফোন করতে দেরি করলে উনি নিজেই ফোন করে খোঁজখবর নেন।

সাতক্ষীরা জেলায় জেবা তাসনিয়াদের বাড়ি। মা নাসিমা খাতুন হাইস্কুলের শিক্ষক। বাবা হাসান হাফিজুর রহমান কলেজের লাইব্রেরিয়ান। মুখমণ্ডলের ত্রুটি নিয়েই জন্ম হয় জেবার। বয়স যত বেড়েছে মুখের এক পাশের মাংস তত বেড়েছে। ছোট্ট ভাইটির সঙ্গে খুনসুটি করে আনন্দময় সময় কাটে জেবার। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত জেবা তাসনিয়া। নাচ, গান ও অভিনয় করে। বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। জুটেছে নানা পুরস্কার। এই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডই তাকে সুযোগ করে দিয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার।

সে কথা এখনও  আনন্দময় স্মৃতিময় জেবা তাসনিয়ার। সে জানায়, ‘আমাদের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ছিল। সে অনুষ্ঠানে এসেছিলেন  সাবেক সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী  আসাদুজ্জামান নূর।  আমি সেখানে পুরস্কার পাই। মন্ত্রী শিক্ষকদের কাছ থেকে আমার ব্যাপারে সবকিছু জানতে পারেন। এরপর তিনিই আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন। এরপর থেকে তিনি যোগাযোগ রাখছেন। তিনি চান আমি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাই।’