‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ’র তৃতীয় দিন: সড়কে নিয়ম মানায় অনীহা





3রাজধানীর বাংলামোটর মোড়। ব্যস্ততম একটি ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্ট। সারা দিনই এই মোড়ে চারদিক থেকেই যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ থাকে। পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য মোড়েই রয়েছে একটি ফুটওভারব্রিজ। তবে সেটি এড়িয়ে ঝুঁকি নিয়েই ব্যস্ততম এই সড়কটি বেশি পার হচ্ছেন পথচারীরা। এছাড়া জেব্রাক্রসিংয়ের ওপরেও যানবাহন থামতে দেখা গেছে। ফলে পথচারীরা সেটি নির্বিঘ্নে ব্যবহার করতে পারছেন না।

অন্যদিকে রাজধানীর সোনারগাঁও ক্রসিং যেমন ব্যস্ততম, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ। এই ক্রসিংয়ে কোনও ফুটওভারব্রিজ নেই। ক্রসিং থেকে খানিকটা দূরে রয়েছে একটি আন্ডারপাস। তবে পথচারীদের বেশিরভাগকেই ঝুঁকি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করে সড়ক পারাপার হতে দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর বাংলামোটর মোড় এবং সোনারগাঁও মোড়ে সরেজমিন এমন চিত্র দেখা যায়।

ডিএমপিতে চলছে ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ’। বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) তৃতীয় দিন অতিবাহিত হলো। গত ১৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া এই ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ’ চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। আইন মানা, অনিয়মে মামলা দেওয়া ও নিয়ম মেনে সড়কে পথচারীদের হাঁটার বাধ্যবাধকতাসহ ১২টি কার্যক্রম নিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশ। তবে পথচারী ও চালকদের অধিকাংশই ট্রাফিক আইন মেনে চলছেন না।

বাংলামোটর মোড়ে ফুটওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও ঝুঁকিপূর্ণভাবে সড়ক পার হন আমির হোসেন। তিনি মগবাজার যাবেন। ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করার কারণ জানতে চাইলে এই পথচারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্রিজে একবার উঠবো আবার নামবো, এতে সময় বেশি লাগে। একটু জরুরি কাজ থাকায় ফুটওভারব্রিজের নিচ দিয়েই দ্রুতই পার হলাম।’

2শুধু আমির হোসেনই নয়, তার মতো অনেক পথচারী ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। খুব কম সংখ্যক মানুষকে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করতে দেখা যায়।

এদিকে সড়কের জেব্রাক্রসিংয়ের আগে ‘স্টপ লাইন’ বরাবর গাড়ি থামানোর নিয়ম থাকলেও সেটি মানছেন না চালকরা। এতে পথচারীরাও জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করতে পারছেন না। এছাড়াও গণপরিবহনের দরজা খোলা রেখে চলাচল এবং স্টপেজ ছাড়াও যাত্রী ওঠানামা করতে দেখা গেছে।

বাংলামোটর ট্রাফিক পুলিশ বক্সে দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. আলতাফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সড়কে যানবাহনের চলাচল ও পথচারীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমরা চেষ্টা করছি। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার পথচারীদের বলছি, আপনারা ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করুন, কিন্তু তারা শোনেন না। দুই একজন শুনলেও বেশিরভাগই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন।’ পথচারীরা অবুঝ নয়, কিন্তু তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জেব্রাক্রসিংয়ের ওপর যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকার কারণ সম্পর্কে এই ট্রাফিক কর্মকর্তা বলেন, ‘আসলে একজন ট্রাফিক সদস্য যখন সড়কে যানবাহন থামাতে সিগন্যাল দেন, তখন যানবাহনগুলো গতি কমাতে কমাতে এই জেব্রাক্রসিংয়ের ওপর চলে আসে। কারণ, চালককেও তার গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে নিতে হয়। একেবারে মাপ অনুযায়ী থাকতে পারে না তারা।’ তবে পরে জেব্রাক্রসিং ক্লিয়ার করে পথচারীদের পারাপারের জন্য তারা জায়গা করে দেন বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে সোনারগাঁও ক্রসিং থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত সড়কের মাঝখানে চলছে মেট্রোরেলের কাজ। এ জন্য সড়কে অর্ধেক জায়গা কমে গেছে। ফলে এই সড়কে যানবাহন চলাচলে এবং যানযট নিরসনে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে।

1সোনারগাঁও ক্রসিংয়ে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আনোয়ার করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ক্রসিংটি অনেক ব্যস্ত থাকে দিনের পুরোটা সময়। এক মিনিটের জন্য কোনও এক পাশ বন্ধ থাকলেই দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়াও সামনে মেট্রোরেলের কাজ চলায় ইদানীং যানজট একটু বেড়ে গেছে।’

ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যানজট নিরসন একা ট্রাফিক পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য পরিবহন শ্রমিক, মালিক, চালক ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার জায়গাটি থাকতে হবে। সবাই যদি একটু সচেতন হই, তবে ঢাকা শহরকে ঝুঁকিমুক্ত ও যানজটমুক্ত একটি শহরে পরিণত করতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘আসলে কেউ আইন মানতে চায় না। এটা একটা বড় সমস্যা। সবাই যদি অন্তত আইন মেনে চলে তবে রাজধানীতে কোনও যানজট থাকবে না। দুর্ঘটনাও অনেকাংশে রোধ হবে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দেওয়া তথ্যমতে, ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ’ শুরুর প্রথম দুদিনে রাজধানীতে অনিয়মের দায়ে ১৩ হাজার ৬৩১টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও ৭৮টি যানবাহনকে ডাম্পিং এবং এক হাজার ৭৩৮টি যানবাহনকে রেকারিং করা হয়। সড়কে উল্টোপথে চলাচলের কারণে দুই হাজার ৪২২টি মামলাও দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ’ চলবে। ঢাকাকে যানজটমুক্ত একটি শহরে পরিণত করতে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে।’ এ জন্য পরিবহন মালিক, শ্রমিক, চালক ও পথচারীদের ট্রাফিক আইন মানা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।