ডিএমপির গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাড়ি চোরচক্র আলাদা আলাদা কৌশলে চুরি করে থাকে। একটি চক্র অন্য চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে না। এরা সাধারণত একজন বা দুজন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। তারা ঢাকার ভেতরে থেকে বা আশপাশের শহর থেকে এসে রাজধানীতে গাড়ি চুরি করে।
গোয়েন্দা একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে সাত থেকে আটটি চোরচক্র রাজধানীতে সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া, বেশ কিছু অপেশাদার চোর রয়েছে, যারা নিয়মিত না হলেও সুযোগ পেলেই গাড়ি চুরি-ছিনতাই করে। দুই-তিন বছর আগেও ২০টির বেশি চোরচক্র সক্রিয় ছিল বলে দাবি গোয়েন্দাদের। এরই মধ্যে মূলহোতাসহ কয়েকটি বড় চোরচক্র গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারেও সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
ডিবি পূর্ব বিভাগের গাড়ি উদ্ধার ও চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাছে আসা অভিযোগের সংখ্যা খুবই সামান্য। গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধারে আমাদের ডিবি পর্যাপ্ত কাজ করেছে, যে কারণে এখন চুরি কমে গেছে। মাঝে মাঝে কিছু অভিযোগ আসে, যেগুলো নিয়ে আমরা গুরুত্বসহকারে কাজ করে থাকি।’
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ উত্তর বিভাগের এডিসি নিশাত রহমান মিথুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে ঠিক কতটি চক্র সক্রিয় আছে, তা বলা মুশকিল। তবে আগের তুলনায় গাড়ি চুরির সংখ্যা অনেক কমেছে, যা অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় কম। যারা এখনও সক্রিয় আছে—তাদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর একটি গাড়ি চোরচক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পশ্চিম বিভাগের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম। তাদের রাজধানীর মিরপুর, ডেমরা ও শ্যামপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, একটি সিএনজি ও ৮টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার হওয়া লোকমান হোসেন (২৫), নিয়ামুল শরিফ (২৫), শেখ জামাল (২২), আব্দুর রসিদ মৃধা (২০), রাব্বি সিকদার (১৯), শাহ্ আলম (৫২) ও মাহাবুব সিকদার (৪৭) প্রত্যেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছে।
এর আগে গত বছরের ২২ মে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১১টি চোরাই মোটরসাইকেল, দুটি সিএনজিসহ ছয়জন চোরচক্রের সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ গাড়িচুরি প্রতিরোধ টিম। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হলো—রফিক, মো. মানিক, আব্দুল আলীম, হাসান মৃধা, মোহাম্মদ আলী ও চান মিয়া। তারা গাড়ির চুরির পর ঘষামাজা করে চেসিস ও ইঞ্জিন নম্বর পরিবর্তন করে ব্যবহার করতো। তারা নতুন চেসিস ও ইঞ্জিন নম্বর লাগানোর জন্য পাঞ্চ মেশিন ব্যবহার করতো বলে জানিয়েছেন অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবি উত্তর বিভাগের এডিসি নিশাত রহমান মিথুন। মোটরসাইকেলের চেসিস ও ইঞ্জিন নম্বর পরিবর্তনের পর সংঘবদ্ধ চক্রটি তুলনামূলক কম দামে তা বিক্রি করতো।
দ্রুত সময়ের মধ্যে ছিনতাই হওয়া স্কুটি উদ্ধার ও অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারায় পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে তাদের অভিযোগ, বিশেষ ক্ষেত্রে পুলিশ এত তৎপরতা দেখালেও অন্য আর ১০ জনের বাইক চুরি গেলে এতটা তৎপর হতে দেখা যায় না।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশ সদস্যরা। ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘আমরা সব অভিযোগই গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে থাকি। বাইক চুরির পর সেটা উদ্ধার করা যথেষ্ট কঠিন কাজ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো থাকে ক্লুলেস। কে কোথায় নিয়ে গেছে তা জানা যায় না। সে জন্য উদ্ধারে বেশি সময় লাগে।’
ডিবি পশ্চিম বিভাগের এডিসি রাহুল পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা কোনও একটি চুরির ঘটনার পর যেকোনও একটি সূত্র ধরে কাজ শুরু করি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই সূত্রটিও পাওয়া যায় না। ক্লুলেস মামলাগুলোর সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য দীর্ঘ সময় লেগে থাকতে হয়। অনেক অপশন ধরে কাজ করে যেতে হয়। ফলে আমরা সফলতা পাই। কখনও একটি বা দুটি গাড়ি উদ্ধার হয়। আবার কখনও কখনও ১০টির বেশি গাড়ি একসঙ্গে উদ্ধারের ঘটনা রয়েছে। আমাদের অব্যাহত অভিযানের কারণে চুরি কমে এসেছে।’ যারা এখনও সক্রিয় আছে—তাদেরও শিগগিরই গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি।