বইমেলার প্রস্তুতি: বাঁধাইয়ে মনোযোগ বেড়েছে

আর মাত্র চারদিন। হাতেগোনা এই দিনগুলোর পরই অমর একুশে গ্রন্থমেলা। মেলায় প্রকাশিতব্য বেশিরভাগ বইয়ের ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে বাঁধাইয়ের কাজ। কাজের চাপ বেশি থাকায় ছুটির দিনেও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বাঁধাইয়ে নিয়োজিত শ্রমিকেরা।

তবে প্রযুক্তির কল্যাণে এখন এই শিল্পে জড়িত শ্রমিকদের ওপর চাপ কিছুটা কম। গত কয়েক বছর যাবৎ ছাপার পর বই ভাঁজ, সেলাই ও বাঁধাইয়ের কিছু কাজ মেশিনে সম্পন্ন হচ্ছে। যদিও এই সুযোগটা সব স্তরের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করতে পারে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, ভালো মানের কনটেন্ট যেমন জরুরি, এখনকার সময়ে ভালো কাগজ, বাঁধাই, সেলাইসহ একটা বইয়ের ভালো মানের প্রোডাকশনটাও জরুরি। তবে মেশিনের সুবিধাটা সবার পক্ষে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বইয়ের রাজ্য ঢাকার বাংলাবাজারে গেলে সারা বছরই বই ও বইকে কেন্দ্র করে অন্যান্য ব্যস্ততা নজরে আসে। কিন্তু বইমেলাকে কেন্দ্র করে এখানে প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকেই ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুণ বেশি। এখন প্রকাশককে সশরীরে প্রেসে যাতায়াত করতে না হলেও সারাক্ষণই বইয়ের শেষ ‘ফিনিশিং’ নিয়ে প্রেসের সঙ্গে যে যোগাযোগ সেটি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে।

আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এবারের মেলায় যে বইগুলো আসবে সেগুলোর মধ্যে বাঁধাইয়ে আছে কিছু, বাকিগুলোর বাঁধাই হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, “এখনকার বাঁধাই তো আগের মতো হাতের ওপর নির্ভরশীল না। অনেক কাজ হয় মেশিনে। কাটিং, সেলাই, বাঁধাই করা হচ্ছে মেশিনে। এছাড়া আরেকটি মেশিন আছে যেটি দিয়ে ফাইনাল টাচ দেওয়া হয়। সেটি আমাদের এখানে নেই। ফলে আন্তর্জাতিক মানের যে ‘ফিনিশিং’ সেটি পাওয়া যাচ্ছে না। বলা যেতে পারে, আমরা এখন মাঝামাঝি রকমের ডিজিটাল সুবিধা পাচ্ছি।”

এবারের বইমেলায় বেশ কয়েকটি আগ্রহোদ্দীপক বই আগামী প্রকাশনীতে পাওয়া যাবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বইমেলায় শেষ মুহূর্তে প্রকাশকদের এই যে প্রস্তুতির তোড়জোড়, সেখানে টেনশন এখন আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। লেখক বই দেওয়ার পর সেটি সম্পাদনা, বানান সংশোধন এবং এরপর প্রেসে ছাপা ও বাঁধাইয়ের কাজ করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটা চলে সারা বছরই। এ সময়টাতে বাঁধাইয়ে চাপটা পড়ে বেশি।’

এবারের মেলায় বইয়ের সংখ্যা কম উল্লেখ করে শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবিন আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি যেহেতু জেলায় জেলায় মুক্তিযুদ্ধের বই নিয়ে গাড়ি পাঠানোর কাজটি করছি, তাই এবারের মেলায় আমার বইয়ের সংখ্যা কম। তবে যেগুলো আছে সেগুলোর কাজ শেষ পর্যায়ে।’

3

তিনি বলেন, ‘এবারের বইমেলার স্টল সাজানো ও অন্য বেশ কিছু কারণে ভালো হবে বলেই এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে।’

সরেজমিন পুরান ঢাকা, ফকিরাপুল ও নীলক্ষেতের বেশ কয়েকটি প্রেসে দেখা গেছে, ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বাঁধাইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্তরা। বেশ কিছু প্রেসে মেশিনের সাহায্যে ভাঁজ, সেলাই ও বাঁধাইয়ের কাজ করতে দেখা গেছে। এসব মেশিন ঘণ্টায় আট হাজার পাতা ভাঁজ করতে পারে উল্লেখ করে প্রেস কর্মচারী রবিউল বলেন, ‘১৬ জনের কাজ একটি মেশিনে হয়ে যায়। ঘণ্টায় আট হাজার পাতা বই আকারে ভাঁজ হয়ে যাচ্ছে, সেলাই হয়ে যাচ্ছে। তারপরও হাতে বাঁধাইয়েরও কাজ চলছে। সবার পক্ষে মেশিনের খরচটা পোষায় না।’

প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও শেষ দিন পর্যন্ত মেলায় বই আনা হয় উল্লেখ করে ভাষাচিত্রের প্রকাশক খন্দকার সোহেল বলেন, ‘আমরা পরিচিত খ্যাতিমান লেখকদের বই করি না। যেহেতু ভাষাচিত্র তরুণ লেখকদের বই নিয়ে কাজ করে, তাই আমাদের মেলার পুরো সময়জুড়ে আমাদের বই বের হয়। এখন প্রেসে আগের মতো জটিলতা না থাকায় অনেক কাজ সহজ হয়েছে। কিন্তু সবার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার সহজ হয়েছে–এমন দাবি করা যাবে না। তবে একটা পরিচ্ছন্ন প্রোডাকশন পাঠকের হাতে তুলে দেওয়ার প্রচেষ্টা বেড়েছে। ভালো কনটেন্টের পাশাপাশি ভালো বাঁধাইয়ে মনোযোগ বেড়েছে। কারণ, একটা ভালো মানের বই হাতে নিলে পাঠক খুশি হন।’ 

ছবি: নাসিরুল ইসলাম