পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি ‘অবমাননাকর’ কনটেন্ট, আসকের প্রতিবাদ

আইন ও সালিশ কেন্দ্রজাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ ও নবম-দশম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বিষয়ে কিশোরীর উপযুক্ত পোশাক, আচরণ, নিরাপত্তা রক্ষায় করণীয় এবং বিভিন্ন শারীরিক গড়নের মেয়েদের যেভাবে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত আপত্তিজনক ও দৃষ্টিকটু। এতে শিক্ষার্থীদের বর্ণবৈষম্যমূলক বার্তা দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
সোমবার (২৮ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নবম-দশম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ের ‘পোশাকের শিল্প উপাদান ও শিল্পনীতি’ অধ্যায়ে মোটা, খাটো, ফরসা, শ্যামলা বর্ণের মেয়ে বা নারীরা কোন পোশাক পরবেন তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
বইয়ে বলা হয়েছে, ‘বেশি স্ফীত বুক ও প্রশস্ত কোমরের অধিকারীদের জন্য ঢিলেঢালা পোশাক উপযুক্ত। প্রশস্ত কোমরের ত্রুটি সুপরিকল্পিত মানানসই কোমররেখার মাধ্যমে ঢাকা যায়।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘ফরসা মেয়েকে যেকোনও রঙের পোশাকেই সুন্দর দেখাবে। অন্যদিকে গায়ের রঙ শ্যামলা হলে গাঢ় রঙ বর্জন করে হালকা রঙ নির্বাচন করতে হবে যাতে তার গায়ের রঙ উজ্জ্বল দেখায়।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিগার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ের ‘পোশাকের যত্ন ও পারিপাট্যতা’ শীর্ষক অষ্টাদশ অধ্যায়ে মানানসই পোশাকের রঙ নির্বাচন করে দেহের ক্ষীণতা এবং স্থূলতা ঢাকার কৌশল শেখানোর পাশাপাশি শ্যামলা রঙের মেয়েদের দেহের বর্ণ কীভাবে উজ্জ্বল দেখানো যাবে, তার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবার ষষ্ঠ শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ের ‘কৈশোরকালীন পরিবর্তন ও নিজের নিরাপত্তা রক্ষা’ বিষয়ক সপ্তম অধ্যায়ে কিশোরীদের দৈহিক পরিবর্তন নিয়ে সংকোচ দূর করতে উপযুক্ত পোশাক পরিধানের সুপারিশ করা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা উপকরণে কীভাবে এমন কুরুচিপূর্ণ, অগ্রহণযোগ্য ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য স্থান পেলো সে বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
সংগঠনটির মতে, পাঠ্যপুস্তকের কনটেন্ট নির্বাচনে আরও বেশি সতর্কতার প্রয়োজন। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এসব পাঠ্যপুস্তক পড়ে নিজেকে গড়ে তুলবে। দেশ গঠনে কাজ করবে। তাদের আমরা শুরুতেই যদি নারীর প্রতি, মানুষের প্রতি অবমাননাকর এমন সব শিক্ষা দিয়ে থাকি, তবে তা আমাদের জাতির জন্য বিপর্যয় বয়ে আনবে। মেয়ে শিশুদের আত্মমর্যাদাবোধ তৈরির জন্য এসব শিক্ষা কোনোভাবেই উপযুক্ত নয়।
জরুরিভাবে পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা করে এ ধরনের কনটেন্ট সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র।