হলে ভোটকেন্দ্র চায় টিএসসির সংগঠনগুলোও, বাইরে চেয়ে ছাত্রফ্রন্টের আল্টিমেটাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে হলে ভোটকেন্দ্র চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করে টিএসসিভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগও ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে রাখার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে ছাত্রদল ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো। আর ছাত্রলীগ এর বিরোধিতা করে গঠনতন্ত্র অনুসারে হলের মধ্যেই ভোটকেন্দ্র রাখার পক্ষে। এবার ছাত্রলীগের সঙ্গে একমত পোষণ করলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র(টিএসসি)ভিত্তিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। তবে হলের বাইরে ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র চেয়ে মিছিল করে উপাচার্যকে চার দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট।

আজ  বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি)দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ডাকসু নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলেনের আয়োজন করে ছাত্রলীগ ও টিএসসিভিত্তিক ২২টি সংগঠনের সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ’। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানায় টিএসসির এই সংগঠনগুলো।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক সংসদের সভাপতি এস এম রাকিব সিরাজী।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আমরা আহ্বান করতে চাই যে ভোটের রাজনীতির সুযোগ নিয়ে কেউ যেন শত-সহস্র শহীদের রক্তস্নাত পবিত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কোনও রাজনৈতিক শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা না করে। ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র ঐতিহাসিকভাবেই হলগুলোতে হয়ে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় এবারও ভোটকেন্দ্র হলে হওয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনও আপত্তি নেই। বরং ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে মেনে নিয়ে এ সিদ্ধান্তকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানিয়েছে।’

সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়,‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগ ও অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে ভোটের রাজনীতির স্বার্থে অযথা ভোটকেন্দ্র নিয়ে বিতর্ক বাড়িয়ে বহুল কাঙ্ক্ষিত ডাকসু নির্বাচনকে বানচাল করার পাঁয়তারায় পা না দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সক্রিয় ছাত্রসংগঠনের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী সম্ভাব্য সব প্যানেল সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়া,দাবি-দাওয়া ও তাদের আবেগ-অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তাদের ইশতেহারগুলো প্রস্তুত করবে, আমরা সেই প্রত্যাশা করছি। নির্বাচনের আচরণবিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বক্তব্য দেন। টিএসসির সংগঠনগুলোর কয়েকজন নেতাও এতে বক্তব্য দেন।

হলের বাইরে ভোটকেন্দ্রের দাবিতে চার দিনের আল্টিমেটাম:

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে করা ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চার দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এই চার দিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করবেন তারা।

হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র চেয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের মিছিল।

ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে করার দাবিতে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ও কলাভবন ঘুরে মিছিলটি প্রশাসনিক ভবনে অবস্থিত উপাচার্যের কার্যালয়ে যায় তারা। কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন জোটের নেতা-কর্মীরা।

সমাবেশে জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সভাপতি ইকবাল কবীর বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের আধিপত্য ও দখলদারি জারি রয়েছে। এ অবস্থায় হলে ভোটকেন্দ্র করা হলে নির্বাচনকেও তারা প্রভাবিত করবে। নির্বাচনের আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকেই আমরা ও বেশিরভাগ সংগঠন হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র করার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু ছাত্রলীগকে সুবিধা দিতে প্রশাসন অগণতান্ত্রিকভাবে সেই দাবি উপেক্ষা করেছে। আমরা মনে করি, এ পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইমরান হাবিব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।