মায়ের কোল থেকে পড়ে গেলো ছেলেটা

 

ভাসানটেকের পোড়া বস্তি

দু’বছরের শিশুটি তার দাদি আদর করে ডাকেন তানভীর, মা ডাকেন তন্ময়। ভাসানটেকে বস্তিতে আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ শিশুটি। তার মা রূপা বলেন, রাতে আগুনের সময় আমার কোল থেকে পড়ে যায় তন্ময়। মানুষের ভিড়ে আমার ছেলেকে আর খুঁজে পাইনি। ঘর হারানোর এই শোকের মাঝেও রূপা খুঁজে বেড়াচ্ছেন তার ছেলেকে।

একজন খুঁজে নিচ্ছেন তার খাটের কাঠামো

ভাসানটেকের এই বস্তিতে আগুন লাগে বুধবার রাত দেড়টার দিকে। ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক মানিকুজ্জামান বলেন, আমরা আগুনের খবর পাই রাত ১ টা ৩৪ মিনিটে। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস কাজ শুরু করে রাত ১ টা ৪৪ মিনিটে। শুরুতে ৯ টি ফায়ার স্টেশন থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে ২১ টি ইউনিটের ১৫০ জন ফায়ার কর্মীর সহায়তায় রাত ৩ টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নেভে সকাল ৮ টায়। এ ঘটনায় আহত হয়েছে একজন। এখন পর্যন্ত কেউ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

আহাজারিরত শিশু তন্ময়ের দাদি
বিষাদ আর কান্নায় ভারি হয়ে আছে ভাসানটেকের এই বস্তিটি। জানা গেছে, এই বস্তিতে প্রায় ৫০০ ঘর ছিল। ডোবা জায়গার ওপরে বাঁশের মাঁচা তুলে বানানো ছিল কাঁচা ঘরগুলো। নিম্ন আয়ের মানুষরাই কম ভাড়ায় থাকতেন এখানে। বাড়িগুলো বানিয়ে যারা ভাড়া দিয়েছিলেন তারাও জায়গার মালিক নন। বস্তির শিশুদের জন্য এনজিও পরিচালিত দুটি স্কুল ছিল এখানে, সেগুলোও এখন শুধুই ছাই।

ধ্বংসস্তূপের ভেতর পোড়া টিন

সরেজমিন দেখা গেছে, আগুনের পোড়া ছাই মধ্যেই ঘরের জিনিসপত্র খুঁজছেন বস্তির মানুষজন। কেউ পোড়া লোহার খাট, কেউ টিন, হাঁড়ি-পাতিল খুঁজে নিচ্ছেন ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে।
পুড়ে যাওয়া আবাস থেকে পোড়া হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে যাচ্ছিলেন শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি ভাঙ্গারির ব্যবসা করতাম। দুই লাখ টাকা ঘরে ছিল। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

কেউ কেউ উদ্ধার করছেন হাঁড়ি-পাতিল
একটা স্তূপের ভেতর দেখা গেলো একটা চৌকি পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। এর ওপরে আধা পোড়া অবস্থায় রাখা একটি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার বাংলা বই। রাতে হয়তো বইটি পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গিয়েছিল শিশুটি। আগুন লাগার কথা কানে আসতেই সব ছেড়ে পরিবারটি ঘর ছেড়ে বের হয়ে যায়। বইটি নেওয়ার সময় হয়নি আর শিশুটির।

চৌকি পোড়া ছাইয়ের ভেতর পড়ে আছে একটা বাংলা বই
মানুষজন পুড়ে যাওয়া টিনের স্তূপ সরাতেই একটা ঘরে পাওয়া গেলো ছাই পড়া দুই হাঁড়ি ভাত। হয়তো রাতের খাওয়া তখনও হয়নি পরিবারটির। কিংবা সকালে কাজে যাবে বলে হয়তো রাতেই রেঁধে রাখা হয়েছিল এই ভাত। আজ সব হারানোর শোকে এই ভাতের খবর নেবে না আর কেউ।
বস্তিবাসীরা জানিয়েছেন, প্রায় ৫০ জন ব্যক্তি এখানে এই বস্তি নিয়ন্ত্রণ করতো। ঘরের আকার ভেদে প্রতি রুমের ভাড়া ১৫শ’ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা।

পোড়া ছাই পড়া ভাত
বস্তিবাসীদের একজন আকতার হোসেন। তিনি বলেন, আমার ২৫টা ঘর ছিল। এগুলোর ভাড়া ১৫ শ’ থেকে দু’হাজার টাকা করে। সব পুড়ে শেষ।