স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পালাবদলের মুহূর্ত ২০২৪ সালের জুলাই। গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসের দিনগুলো ফিরে দেখতে বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রয়াস।
আজ ৪ জুলাই। গত বছর এই দিনে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় আপাতত বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল (নিয়মিত আপিল) করতে বলেছেন আদালত। পাশাপাশি মামলার শুনানি মুলতবি রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। শুনানিতে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বলেন, আপাতত হাইকোর্টের রায় যেভাবে আছে, সেভাবে থাকুক। রায় প্রকাশ হলে আপনারা নিয়মিত আপিল দায়ের করেন। আমরা শুনবো।
রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময় চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ ‘নট টুডে’ (বৃহস্পতিবার নয়) বলে আদেশ দেন। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমে বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে।’
এদিকে এদিন সকাল থেকেই রাজধানীর আবহাওয়া গুমোট হয়ে ছিল। দুপুরে কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি আবার কোথায় ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও হয়। এমন আবহাওয়ার মধ্যেই আপিল বিভাগের এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও রাজধানীর রায় সাহেব বাজার মোড়ও অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
শাহবাগে অবস্থানকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখানে এক ঘণ্টার জন্য আসিনি। আমরা দাবি আদায় করার জন্য এসেছি। দাবি আদায় করে ঘরে ফিরবো। শিক্ষার্থীরা জেগে উঠেছে। দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১ তারিখ থেকে আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করছি, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে অবস্থান কর্মসূচিও চলবে। সারা দেশে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।’
পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে সন্ধ্যা ৬টার পর শাহবাগ ছাড়েন আন্দোলনকারীরা। এরপর ধীরে ধীরে শাহবাগ এলাকার যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে। শিক্ষার্থীদের ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—শুক্রবার অনলাইন-অফলাইনে বৈঠক, শনিবার বিকাল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি এবং রবিবার সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ অবস্থান ধর্মঘট।
এর আগে বেলা ১১টার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে মিছিল ও স্লোগান নিয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেন তারা। দুপুর ১২টার সময় শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। তাদের অবরোধের পর ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন অবরোধ কর্মসূচিতে।
এদিকে দুপুর ১টার দিকে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড় অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তা এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন তারা। পরে ১টার দিকে সেখান থেকে রায় সাহেব বাজার অভিমুখে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে যাত্রা শুরু করলে বৃষ্টির বাধায় পড়েন। পরে বৃষ্টিতে ভিজেই তারা রায় সাহেব বাজার মোড় অবরোধ করেন।
এদিন ঢাকার বাইরে একই দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১টার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ি অংশ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটারজুড়ে পরিবহন থেমে থাকতে দেখা যায়। অন্যদিকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টায় বৃষ্টি উপেক্ষা করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে অবস্থান কর্মসূচির পর মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।