একজন ‘ধর’ ‘ধর’ বলে, আরেকজন পেটে লাথি মারে: বেনজির

ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্ছিত উম্মে হাবিবা বেনজিরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফরিদ হাসানকে মারধরের ঘটনার অভিযোগপত্র স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের প্রভোস্টকে দিতে গিয়েছিলেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেন, শামসুন্নাহার হলের ভিপি শেখ তাসনীম আফরোজ ইমি, ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির, অরণি সেমন্তি খানসহ কয়েকজন। তবে নুরসহ ছাত্রনেতারা হলটির ভেতরে গেলে সেখানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দেয় ও অবরুদ্ধ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর হলটির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের অন্য নেতাদের আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার ও লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন ইমি ও বেনজির। তাদের গায়ে ডিমও ছুড়ে মারা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এস এম হল ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস ।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এসএম হলে এ ঘটনা ঘটে।

হামলার বিষয়ে উম্মে হাবিবা বেনজির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আমরা সন্ধ্যায় ফরিদকে মারধরের ঘটনার লিখিত অভিযোগ প্রভোস্টকে জানাতে এসএম হলে যাই। আমরা হলের নিচে অপেক্ষা করছিলাম, নুর ফরিদকে নিয়ে তার রুমে যায় রক্তমাখা ড্রেস পাল্টানোর জন্য। সে সময় হল ছাত্রলীগের ছেলেরা আমাদেরকে বিভিন্ন অশালীন কথা বলে এবং এক সময় তারা আমাদেরকে ডিম ছুঁড়ে মারে। এরপর আমরা এস এম হলের মূল গেটে অবস্থান করি। নুর ভেতরে অবরুদ্ধ ছিল। ভেতর থেকে নুরসহ অন্যরা যখন বের হয়, তখন আমরা দেখি ছাত্রলীগের হল শাখার নেতৃবৃন্দ আমাদের পেছনে পেছনে আসতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা এলোপাথাড়ি লাথি, কিল ঘুষি শুরু করে। আমাকে উদ্দেশ করে একজন বলে, ‘এরে ধর ধর’! আরেকজন আমার পেটে লাথি মারে।’’   

শামসুন্নাহার হলের ভিপি শেখ তাসনীম আফরোজ ইমি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘উর্দু বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফরিদ ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী ছিল, তাকে বিভিন্নভাবে ছাত্রলীগ চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচন করতে দেয়নি। পরবর্তীতে অছাত্রদের বের করে দেওয়ার যে অভিযান ছিল সেখানে তার ভূমিকা ছিল। এজন্য  গতকাল হলে ছাত্রলীগের নেতারা ফরিদের ওপর হামলা চালিয়ে তার মাথা ফাটিয়ে দেয়। এর প্রতিবাদে আমরা এসএম হলে যাই। ছেলেদের হল হওয়ায় আমরা  গেটের বাইরে অবস্থান করছিলাম। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের উদ্দেশ করে আপত্তিকর উক্তি করে। তাদের কয়েকজনকে আমি চিনতে পেরেছি।

প্রভোস্টের সহায়তায় নুররা বের হয়ে আসার পর ছাত্রলীগের ছেলেরা আমাদের গায়ে ডিম ছুড়ে মারে।

পরে নুরের সঙ্গে করা সংবাদ সম্মেলনে ইমি আরও দাবি করেন, ‘এসএম হলের সামনে বারবার পেছন থেকে আমাকে টানা হচ্ছিল। কেন টানা হচ্ছিল এটা তদন্তের দাবি রাখে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি যখন এসএম হলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপসকে জিজ্ঞেস করি যে আমার গায়ে ডিম কেন মারা হয়েছিল?  সে উল্টো আমাকে ধমকিয়েছে। তখন তার সঙ্গে হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শিমন ছিল। সেও আমার সঙ্গে খুব বাজে আচরণ করেছে। সে এক পর্যায়ে সে আমার হাত ধরে অশালীন মন্তব্য করে।  এভাবে তারা আমাদের ‘হ্যারেসমেন্ট’ করেছে। ছাত্রলীগের এইসব নেতা আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা কোনও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আচরণ হতে পারে না। সে এর আগেও নির্যাতনের অভিযোগে বহিষ্কৃত হয়েছে। আমার সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে এর সুষ্ঠু বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা এখান (ভিসির বাসভবন) থেকে সরবো না।’

প্রত্যক্ষদর্শী সাধারণ শিক্ষার্থীরা নুর ও তার সঙ্গীদের ওপর ছাত্রলীগের কর্মীরা ডিম ছুড়েছে বলে দাবি করলেও এসএম হলের ভিপি কামাল বলেছেন,‘এসব মিথ্যা অভিযোগ। মাদক ব্যবসায়ীকে বাঁচানোর জন্য তিনি (নুর) হলে এলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ডিম নিক্ষেপ করেছে।’

প্রভোস্টের সামনে এধরনের ঘটনা হলেও তিনি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তাকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পুনরায় আবার ফোন দেওয়া হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে ইমির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসএম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তার সঙ্গে এ ধরনের কোনও কথা হয়নি। ইমিকে হলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করেছিল যে ডাকসুর জিএস এবং এজিএস থাকতে আপনি এখানে কেন এসেছেন? তার সঙ্গে এ ধরনের কোনও কথাই হয়নি।’

বেনজিরের ওপর হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে পরে এসএম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপসকে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের প্রো-ভিসি মহোদয় হলে গিয়েছেন। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। হলে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। যার যা অভিযোগ, কী ঘটেছিল সেগুলো জানানোর জন্য আমরা সেখানে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রভোস্ট হলে আছেন এই মুহূর্তে, দুই পক্ষেরই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আছে। সেগুলো লিখিতভাবে নেওয়া হবে। আমরা এর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।    

এদিকে মিছিল নিয়ে এসএম হলে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হওয়া ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর এই ঘটনায় জড়িতদের বহিষ্কারসহ চার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।

তার অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ছাত্রলীগের ‘কবল’ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোকে মুক্ত করা, অছাত্র ও বহিরাগতদের তাড়াতে হলগুলোতে অভিযান পরিচালনা এবং নিয়মিত ছাত্রদের হলের সিটগুলোতে থাকার ব্যবস্থা করা।

দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান থেকে না সরার ঘোষণা দিয়ে নূর বলেছেন, “দাবি আদায় করেই এখান থেকে উঠবো। যদি দাবি আদায় করতে পারি তাহলেই শিক্ষার্থীদের মাঝে ফিরে যাবো। আর দাবি আদায় করতে না পারলে প্রয়োজনে লাশ হয়ে ফিরবো।”