দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে ‘শ্রীলঙ্কায় নারকীয় জঙ্গি হামলা, এরপর?’ শীর্ষক বৈঠকিতে এসব কথা বলেন বক্তারা। মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) বিকালে বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিওতে অনুষ্ঠিত হয় সাপ্তাহিক এই আয়োজন।
প্রযুক্তির কারণে জঙ্গিবাদ সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আইএসকে সিরিয়া থেকে এসে এখানে যুদ্ধ করতে হবে কেন? আল কায়েদা কি সারা বিশ্বে সংগঠন তৈরি করতে পারবে? আল কায়েদা একটি কনসেপ্ট, একটি আইডিওলজি। এখান থেকে বসে এটি ধারণ করতে তো সিরিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করা লাগে না। বাগদাদি এসে বলেছে, “লোন উলফ” হক অ্যাটাক হোক। কেউ সেই অনুযায়ী আক্রমণ করলো! নামমাত্র আইএসপন্থী যারা, তারা বাচ্চাসহ আইএসের হয়ে বাইয়াত নিচ্ছে। তার জন্য তো সিরিয়া যাওয়া লাগছে না, দেশের কোনও এক প্রান্তে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করেই জঙ্গি হওয়া যায়। সেই হাজী শরিয়তউল্লাহ, তিতুমীরের মতো ইসলামিক স্টেটের কথাই তো বলছে এরা। তাই আমি সে জায়গা থেকে বলছি, আমরা চিন্তা করিনি সমাজ থেকে এটা জন্ম হয়।’
রাতারাতি একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মনমানসিকতার পরিবর্তন হতে পারে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে কথা বলি, কিন্তু মৌলবাদ নিয়ে কথা বলি না। সমাজটাকে আমরা ধীরে ধীরে ওই জায়গায় নিয়ে গিয়েছি। একমাত্র রাজনৈতিক শক্তিই এটাকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে। ওই রাজনৈতিক শক্তি এখানে দিনের পর দিন দুর্বল হয়েছে। রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে মৌলবাদ ঢুকেছে। সরকারের কাঠামোর মধ্যে ঢুকেছে। এটা প্রতিরোধ করতে যদি উদার গণতান্ত্রিক ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা না থাকে, তাহলে পুলিশের কাউন্টার টেরোরজিমের মনিরুল ইসলামকে দিয়ে ১০০, ২০০, ৫০০ জঙ্গি মারতে পারবেন, জঙ্গিবাদ দমাতে পারবেন না।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে ঘিরে ইতোপূর্বে আমরা একটি তৎপরতা লক্ষ করেছি। ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানের ঘটনার দুই থেকে তিন বছর আগে যখন সারা দেশে একের পর এক টার্গেট কিলিং হচ্ছিল, তখন সারা বিশ্ব থেকে আমরা নানা মন্তব্য পাচ্ছিলাম। সে সময় আমাদের কাছে মনে হয়েছিল, বিশ্বের একটি পক্ষ বা শক্তির সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু মানুষ সুর মিলিয়েছিলেন, বাংলাদেশে আইএস এসে গেছে।’
ইউরোপ আমেরিকাতেও জঙ্গিবাদ রয়েছে উল্লেখ করে আব্বাসী বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশে কেনো জঙ্গিবাদ থাকবে? এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপার! জঙ্গির উত্থান তো যুক্তরাষ্ট্রতেও হচ্ছে, যুক্তরাজ্যতেও হচ্ছে, ফ্রান্সে হচ্ছে, জার্মানিতে হচ্ছে। এখানে আমাদের একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ সাম্প্রতিককালে অনেক এগিয়েছে। এখন কিন্তু আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা মিলেমিশে কাজ করছে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো। আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। এখন বিষয়টি দাঁড়িয়েছে– “সব দোষ গরিবের” মতো। এখন আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো কেনো নেপালের ঘটনা আড়াল করে বাংলাদেশেরগুলো তুলে ধরছে? দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, বাংলাদেশ কখনও কখনও অপসাংবাদিকতার শিকার হয়।’
এর সমাধানে সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও মজবুত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, আমাদের সমাজ ভেঙে গেছে। এই ভেঙে যাওয়া সমাজ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে এক জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। দলীয়করণের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসা খুবই জরুরি। না হলে আমাদের সমাজের এই জায়গা থেকে উঠে আসা খুবই কষ্টকর।’
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন