যৌন হয়রানি করাই ছিল তার নেশা!

আবদুস সাত্তারবয়স চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। গাড়িচালক হিসেবে কাজ করতো সে। কিন্তু এর বাইরে বিকৃত এক নেশা ছিল তার। পথেঘাটে গাড়ি নিয়ে চলতে-ফিরতে একাকী কোনও নারী দেখলেই দাঁড়াতো তার পাশে। কখনও কুপ্রস্তাব দিতো সামনা-সামনি। আবার কখনও গায়ে হাত দিয়ে দৌড়ে উঠে যেত গাড়িতে। পালিয়ে যেত মুহূর্তেই। চলতি পথে এরকম বিকৃত ইচ্ছা চরিতার্থ করে আসছিল অনেক দিন ধরেই। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি তার। রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে এরকম অশোভনীয় আচরণ বা যৌন হয়রানি করতে গিয়ে ধরা পড়ে সে। ঘটনার সময় গাড়ি নিয়ে পালালেও ওই তরুণী গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি টুকে রেখেছিলেন। ঘটনার সবিস্তার উল্লেখপূর্বক মামলা করেন থানায়। পরে খিলগাঁও থানা পুলিশ গ্রেফতার করে বিকৃত মানসিকতার সেই যুবককে। তার নাম আবদুস সাত্তার। গ্রেফতারের পর সাত্তার ওই নারীসহ আরও অনেক মেয়েকে যৌন হয়রানির কথা স্বীকার করেছে।

পুলিশ জানায়, রাজধানীর খিলগাঁও থানাধীন শাহজাহানপুর এলাকার বাসিন্দা এক শিক্ষার্থী সিএনজিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতেন। এজন্য প্রতিদিন খিলগাঁও কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে সিএনজি অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করতেন তিনি। এই সময়েই গত মাসের শুরুতেই হঠাৎ একটি প্রাইভেটকার এসে থামে তার সামনে। প্রাইভেটকারের চালক তার কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করে। প্রথমদিন বিষয়টিতে বিব্রত হলেও পরিবারের সদস্যদের জানাননি ওই শিক্ষার্থী। কিন্তু একই ঘটনা ঘটে আরও দুবার। সর্বশেষ গত ১৩ মে খিলগাঁও কমিউনিটি সেন্টারের কাছে ময়লার ভাগাড়ের পাশে সিএনজি অটোরিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই শিক্ষার্থী। সেদিনও সাদা রঙের সেই প্রাইভেটকারটি তাকে অনুসরণ করে পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। গাড়ির স্টার্ট বন্ধ না করে দাঁড় করিয়ে রেখে তরুণীর সঙ্গে অশ্লীল ইঙ্গিত ও গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে। মুহূর্তেই ওই তরুণী চিৎকার করে ওঠেন। সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে গাড়িতে উঠে পালিয়ে যায় চালক। তবে তরুণী গাড়িটির নম্বর টুকে রাখে।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী ওই তরুণীর স্বজন সূত্রে জানা গেছে, ওই তরুণী বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানালে তারা খিলগাঁও থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে খিলগাঁও থানা পুলিশ প্রাইভেটকারটির নম্বর (ঢাকা মেট্রো গ ২৫-৮২৫৫) ধরে বিআরটিএ থেকে গাড়ির মালিকের সন্ধান পায়। পরে গত ১৭ জুন ওই গাড়ির মালিক ও তার চালককে কোনও কিছু না জানিয়েই থানায় ডাকা হয়। এরপর ভুক্তভোগী ওই তরুণীকে ডেকে গাড়িচালককে শনাক্ত করতে বলা হয়। পরে টিআই (টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন) প্যারেডের মাধ্যমে গাড়িচালক সাত্তারকে শনাক্ত করেন ওই তরুণী। টিআই প্যারেড হলো একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তিকে দাঁড় করিয়ে রেখে বাদী বা অভিযুক্তের দ্বারা অপরাধী শনাক্ত করা।

পুলিশ জানায়, শনাক্তের পর প্রথমে গাড়িচালক সাত্তার যৌন হয়রানির কথা অস্বীকার করলেও জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে সব স্বীকার করে। ১৭ জুন ওই তরুণীর বাবা এসএমএ মোর্তুজা রাশেদ বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে খিলগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, আবদুস সাত্তার একজন চিকিৎসকের গাড়ি চালাতেন। তার গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন এলাকায়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া আবদুস সাত্তার অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি মেয়েকে যৌন হয়রানি করার কথা স্বীকার করেছে।

পুলিশের খিলগাঁও জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘সাধারণত এসব ক্ষেত্রে সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে কেউ অভিযোগ করে না। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এই মেয়েটির অভিযোগ আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে বিআরটিএ থেকে গাড়ির মালিককে শনাক্ত করি। পরে ওই তরুণীর মাধ্যমে চালককে শনাক্ত করি।’
তিনি বলেন, ‘আবদুস সাত্তার আরও অনেক তরুণীকে চলতি পথে যৌন হয়রানির কথা স্বীকার করেছে। এটা তার কাছে এক ধরনের নেশায় পরিণত হয়েছিল। তাকে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলাটির তদন্তকাজ শেষ করে দ্রুত আদালতে চার্জশিটও দেওয়া হবে।’