১৭ শতাংশ মানুষ জানেনই না বাজেট কী: জরিপ

ব্র্যাকসহ তিনটি সংস্থার বাজেট বিষয়ক জরিপের তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে সংবাদ সম্মেলনে

দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে এক জরিপে দেখা গেছে ১৭ শতাংশ মানুষ জানেন না বাজেট কী। দেশের দরিদ্র ও অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর জাতীয় বাজেট কী প্রভাব ফেলে এবং তাতে কী ধরনের ন্যূনতম পরিবর্তন আনা হলে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হবে—সে বিষয়ে এক গবেষণা প্রকল্প হাতে নিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান আই সোশ্যাল ও উন্নয়ন সমন্বয়।

গবেষণাপূর্ব জরিপের ফলাফল জানাতে মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে জরিপের নানা তথ্য তুলে ধরা হয়।

গবেষকরা জানান, প্রাথমিক জরিপে ফলাফলকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকরিতা, জাতীয় বাজেটে বিদ্যমান বিভিন্ন অগ্রাধিকার সম্পর্কে জনভাবনা এবং প্রান্তিক খানাগুলোতে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা। সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা বিষয়ে প্রাপ্ত জরিপে জানা গেছে,  ৪ হাজার ৮০০ খানার মধ্যে ১০ শতাংশ অন্তত একটি সামাজিক সুরক্ষা সেবা গ্রহণ করেছে এবং সেবাগ্রহীতার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ নারী।  বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা—এই চার ধরনের সেবায় অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়েছে। সেই তুলনায় অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা সেবাগ্রহীতা কম বলেও মনে হয়েছে জরিপে।

জরিপের আরও প্রাপ্তি তুলে ধরে গবেষকরা জানান, দুই তৃতীয়াংশ লোক মনে করেন বাজেটের ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ে। পাঁচ ভাগের এক ভাগ লোক মনে করে বাজেটের তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব জনজীবনে পড়ে না। আর ১৭ শতাংশ লোক জানেই না বাজেট আসলে কী!

আয়োজকরা জানান, গবেষণার অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো সূচককে সমন্বিত করে একটি নিবিড় ডাটা মডেল তৈরির কাজ চলছে। এই মডেলের মাধ্যমে সমাজে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর বাজেটের সামগ্রিক প্রভাব সম্পর্কে ধারাবাহিক ও নিবিড় সমীক্ষা করা সম্ভব। এই গবেষণা ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলবে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে আমরা আমাদের পকেট থেকে ৬২ থেকে ৬৭ শতাংশ খরচ করি, সরকার থেকে পাই না। সেখানে এই জরিপে প্রায় ৫০ শতাংশ বলছে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। আমাদের দেশের গরিব মানুষরা অর্থনীতিবিদ থেকে কম জানে বলে আমি মনে করি না। সরকার প্রাধান্য দিচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য। তারপর কৃষিতে ভর্তুকি। এরপর ৩০ শতাংশ বলছে তরুণদের কথা, আমরা তাদের চাকরি দিয়ে তৈরি করবো নাকি উদ্যোক্তা তৈরি করবো সেটি পরের প্রশ্ন। কিন্তু তরুণদের জন্য যে কিছু করতে হবে বাজেটে এইটা গরিব মানুষের চাওয়ার মধ্যে চলে আসছে। আমরা যে সার্ভেটা করেছি এটা যদি নিয়মিত করতে পারি, তাহলে আমাদের নীতিনির্ধারকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বড় উপকারী হবে বলে আমরা মনে করি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) রিসার্চ ফেলো ড. নাজনিন আহমেদ, আই সোশ্যালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. অনন্য রায়হান ও ব্র্যাকের পরিচালক কেএএম মোরশেদ প্রমুখ।