সকাল সাড়ে ১০টার দিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর বলেন, জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের আমরা নিশ্চিহ্ন করে দিতে সক্ষম হয়েছি। সারাবিশ্বেই জঙ্গি হামলা হচ্ছে। শুধু ২০১৮ সালেই ইউরোপজুড়ে ১২৯টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ থেকে বোঝা যায়, জঙ্গিরা বৈশ্বিকভাবে নিশ্চিহ্ন হয়নি।
এদিকে সকাল ১০টার আগেই হলি আর্টিজানে নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। সেলিমা রহমান বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পর সরকার কিছুটা হলেও সফল হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিক সন্ত্রাসবাদ দমনে ব্যর্থ হয়েছে। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
৪৬ বছর ধরে এ দেশে বসবাস করছেন ফাদার আতিলিও। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর সবাই সচেতন হয়েছে। বিপদ যেকোনও সময় আসতে পারে। আর কোনও সর্বনাশ যাতে না হয়। এই ঘটনায় সবাই শিক্ষা পেয়েছে, সচেতন হয়েছে। আমি ৪৬ বছর ধরে আছি। ভয় কিংবা বিপদ কোনোটাই বোধ করি না।
আনেজি বারেলো নামে আরেক ইতালিয়ান নাগরিক বলেন, হলি আর্টিজানের এই একটি ঘটনা বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করে না। বাংলাদেশের মানুষ অনেক শান্তিপ্রিয়। বাংলাদেশের মানুষ এসব পছন্দ করে না। একটি ছোট গ্রুপ এ কাজ করেছে। সেই রাতের ঘটনা মনে করে তিনি বলেন, আমি সেদিন ইতালিয়ান অ্যাম্বাসেডরের বাসায় ডিনার করছিলাম। হঠাৎ এই খবর পাই। আমরা খুব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম। আমার পরিচিত বন্ধুরা হলি আর্টিজান বেকারিতে ছিল। বন্ধু ক্লাউডিয়ার সঙ্গে কথা হয় ভোর ৪টায়। সে অনেক কষ্টে বেঁচে গিয়েছিল। সে ইতালি ফিরে গেলেও আবার বাংলাদেশে এসেছে। সে এখনও বাংলাদেশেই কাজ করে। আমরা বাংলাদেশকে ভালোবাসি। উল্লেখ্য আনেজি বারেলো প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর স্ত্রী।
এছাড়া সকাল সাতটায় ঢাকাস্থ জাপানের রাষ্ট্রদূত এবং বেলা ১১টায় ইতালির রাষ্ট্রদূত হলি আর্টিজান বেকারিতে এসে নিহতদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শাওনের ছবি হাতে মায়ের কান্না
বেলা ১১টার দিকে হলি আর্টিজান বেকারিতে আসেন এই হামলায় নিহত জাকিরুল হাসান শাওনের মা মাসুদা বেগম। দুই হাতে শাওনের ছবি। একটি রক্তাক্ত। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার ছেলে হত্যার বিচার আমি পেলাম না। আমার ছেলেটাকে র্যাব, পুলিশ নির্যাতন কইরা মারছে। ওরে জঙ্গি মনে করছিল। কিন্তু দুই বছর পর ঠিকই প্রমাণ হইছে ও জঙ্গি ছিল না। মাসুদা বেগম বলেন, আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না। মালিক মাসে মাসে পাঁচ হাজার করে টাকা দেয়। ওতে কোনোরকম চলি। আমা গো দেখনের কেউ নাই।