গণপিটুনিতে অংশগ্রহণকারী ও গুজব রটনাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না: আইজিপি





পুলিশ সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীগণপিটুনি দিয়ে যারা মানুষ হত্যা করছে এবং গুজব ছড়াচ্ছে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। যে যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেন, আমরা কাউকে ছাড় দেবো না। প্রত্যেককে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’


বুধবার (২৪ জুলাই) বেলা ১১টায় পুলিশ সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পুলিশ প্রধান।
পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, ‘গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে আপনি কিন্তু হত্যা মামলার আসামি হয়ে যাচ্ছেন। হত্যা মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হয়ে থাকে। যেখানেই থাকুন না কেন, আমরা আপনাকে খুঁজে বের করবো এবং কঠোর শাস্তির জন্য আইনের হাতে তুলে দেবো।’
আইজিপি বলেন, ‘কেউ যদি এরকম ঘটনা (ছেলেধরা) দেখতে পান বা জানতে পারেন, কাউকে যদি সন্দেহ হয়—আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করবেন। অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে।’
পুলিশ প্রধান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) থেকে এক সপ্তাহ দেশজুড়ে গুজববিরোধী সচেতনতা সপ্তাহ পালন করা হবে। এর অংশ হিসেবে প্রতিটি জেলা, থানা ও মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ সদস্যরা উঠান বৈঠক করবেন। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে গুজবে আতঙ্কিত না হওয়ার প্রচারণা চালাবেন।’

তিনি বলেন, ‘সচেতনতা সপ্তাহের অংশ হিসেবে আগামী শুক্রবার (২৬ জুলাই) জুমার নামাজের খুতবার সময় ইমামদের গুজববিরোধী বয়ান করতে বলা হবে।’
ড.  জাবেদ পাটোয়ারী জানান, এ পর্যন্ত গুজব রটানোর অভিযোগে ৬০টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ২৫টি ইউটিউব চ্যানেল ও ১০টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করা হয়েছে। সারাদেশে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন আট জন, যাদের কেউই ছেলেধরা বা শিশু অপহরণকারী ছিলেন না। এমনকি যারা গণপিটুনিতে আহত হয়েছেন, তাদের কারও বিরুদ্ধে ছেলেধরা বা শিশু অপহরণের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। গুজব ও গণপিটুনির অভিযোগে ৩১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১০৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নেত্রকোনার একটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে আইজিপি বলেন, ‘ওই ঘটনায় রবিন নামে যে ব্যক্তি জড়িত, তিনি ছিলেন মাদকাসক্ত। ২০১৭-১৮ সালে দুবার তাকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। পুলিশের হাতে তিনি গ্রেফতারও হয়েছিলেন। মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে একবার তিনি নিজের স্ত্রীর গলাকাটার চেষ্টা করেছিলেন। ফলে ওই ঘটনাটি কোনোভাবেই ছেলেধরা সংক্রান্ত নয়।’ তিনি বলেন, ‘বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, সাভার, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার প্রতিটি ঘটনা আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি। এসব ঘটনার কোনোটিতেই ছেলেধরা সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি।’

পুলিশ প্রধান আরও বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে স্বার্থান্বেষী একটি মহল এসব গুজব উসকে দিচ্ছে। তারা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টিতে অন্য উপায়ে ব্যর্থ হয়ে এ পথ বেছে নিয়েছে। বৃত্তের আড়ালে থেকে বা দেশের বাইরে থেকে এ ধরনের গুজবের পোস্ট অনেকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে গ্রেফতার হওয়া অনেকেই সরকারবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। এমনকি দুবাই থেকে এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছেন, তিনি সরকারবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমরা তাকেও শনাক্ত করেছি।’