জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্ট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান দুই সিটি করপোরেশনে মশার ওষুধ সরবাহ করে আসছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ও ৪ অক্টোবর কোম্পানিটিকে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯০ লিটার ওষুধ সরবরাহ করার জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ১১ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে ওষুধগুলো সরবরাহের শর্ত দেওয়া হয়। দুটি চালানের মাধ্যমে প্রথম ধাপে ৫০ হাজার লিটার ও দ্বিতীয় ধাপে ৬৪ হাজার ৯৯০ লিটার ওষুধ ঢাকেশ্বরীতে মশক নিবারণ দফতরে সরবরাহ করা হয়।
কিন্তু এ দুটি চালান ডিএনসিসির (ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন) নিজস্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় সেগুলো গ্রহণ করা হয়নি। ওই ওষুধ ডিএসসিসির (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। পরে ডিএসসিসি সেগুলো ব্যবহার করে। নতুন করে জরুরিভিত্তিতে কিছু ওষুধ কেনার জন্য সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া অনুসারে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ সময় ওষুধ সরবরাহের জন্য লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্ট লিমিটেড ও নোকন লিমিটেডের কাছ থেকে দর প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী, লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্ট লিমিটেড প্রতি লিটার ওষুধ ২১৭ টাকা ও নোকন ২৬৯.৬৬ টাকা দর প্রস্তাব করে। কিন্তু সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও পিপিআর (সরকারি ক্রয় আইন) লঙ্ঘন করে লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্টকে কার্যাদেশ না দিয়ে নোকনকে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নোকনকে ওষুধ সরবরাহ করার জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
কার্যাদেশ পাওয়ার পরের মাস ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে নোকন লিমিটেড ডিএনসিসিতে মশার ওষুধ সরবরাহ শুরু করে। মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সংস্থাটিতে কোনও ওষুধ ছিটানো হয়নি। আপদকালীন সময়ের জন্য অন্য সংস্থা থেকে ওষুধ ধার নেওয়া হয়নি। এছাড়া ওই মাসে ঠিকাদারকে পৃথক এক চিঠিতে গুদামে ওষুধ শূন্য হয়ে পড়ার বিষয়েও একটি চিঠি দেয় ডিএনসিসি।
ডিএনসিসির একাধিক মশক নিধন কর্মী ও সুপারভাইজার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত নভেম্বর নয়, মূলত সেপ্টেম্বর থেকে আমাদের ওষুধ ছিল না। তখন ওষুধ না দিয়ে দুই মাস শুধু ধোঁয়া দেওয়া হয়েছে যাতে মানুষ বুঝতে না পারে। পরে নভেম্বর মাস থেকে মার্চ পর্যন্ত কোনও ওষুধই দেওয়া হয়নি। আমরা শুধু এসে এসে হাজিরা দিয়ে চলে যেতাম।’তারা আরও বলেন, আগে দেখতাম ওষুধ কম থাকলে অন্য সংস্থার কাছ থেকে ধার নেওয়া হতো। কিন্তু এত বড় একটা ক্রাইসিস গেছে ধার নেওয়া হলো না।’
লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেডের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত নভেম্বরে আমাদের একটা চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তাদের (ডিএনসিসি) গুদামে ওষুধ নেই। আমাকে যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে সেখানেও ওষুধ না ছিটাতে পারার কথা উল্লেখ রয়েছে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের কোনও ওষুধ ছিল না। এ সময় কোনও ওষুধ ছিটানো হয়নি।’
গত ২২ নভেম্বর দি লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্ট লিমিটেডকে দর প্রস্তাবেব বিষয়ে পাঠানো এক চিঠিতে সংস্থাটির প্রধান ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মশক নিধন কাজে ব্যবহৃত কীটনাশক অ্যাডাল্টিসাইড (রেডি ফর ইউজ) স্টোরেজে মজুত শূন্য। তাই জনস্বার্থে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়া অনুসরণে ডিএনসিসি কিছু পরিমাণ উন্নতমানের কীটনাশক অ্যাডাল্টিসাইড (রেডি ফর ইউজ) সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছে।’
এছাড়া ওষুধের মানহীনতার অভিযোগ তুলে একই কোম্পানিকে পাঠানো অপর এক কারণ দর্শানোর নোটিশের একটি অংশে এই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ‘ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকায় জনস্বার্থে মশক নিধন সেবা কাজে এ কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। আপনি/আপনাদের প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যথাসময়ে উন্নতমানের/গ্রহণযোগ্য মশক কীটনাশক সরবরাহ করতে ব্যর্থতার জন্য নগরবাসী মশক নিধন সেবা কাজ হতে বঞ্চিত হওয়ায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন তথা সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।’
নোকন লিমিটেডের সরবরাহ করা ওষুধ কবে থেকে ডিএনসিসি ব্যবহার করছে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার মো. খালিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা জানুয়ারি মাসে সিটি করপোরেশনের কার্যাদেশ পাই। কয়েক ধাপে তাদের ওষুধ দিয়েছি। প্রথম চালান সরবরাহ করেছি মার্চের শুরুতে। এরপর কয়েক ধাপে ওষুধ দিয়েছি।’