রাজনীতি থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত বুয়েট শিক্ষকদের

শিক্ষকদের দাবি ঘোষণা করছেন বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. একেএম মাসুদ শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী সব ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ রাজনৈতিক দলভিত্তিক শিক্ষক-রাজনীতি থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তারা। বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. একেএম মাসুদ এ বিষয়ে ঘোষণা দেন।

একই সঙ্গে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষকরা।  না হলে সরকারের কাছে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জোর দাবি জানানো হবে বলে ঘোষণা দেন তারা।

বুধবার (৯ অক্টোবর) শিক্ষক সমিতির এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত এবং প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ সময় শিক্ষকরা সাত দফা দাবির বিষয়ে একমত হন।  তাদের দাবিগুলো হলো– আবরার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে,  আবরারের পরিবারকে মামলা পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দিতে হবে,  হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করতে হবে,  হলগুলো থেকে অবৈধভাবে কক্ষ দখলকারীদের বিতাড়িত করতে হবে, তদন্ত কমিটি গঠন করে অতীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনকারীদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, বুয়েটে সব রাজনৈতিক অঙ্গসংগঠনভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে শিক্ষক সমিতি একমত। প্রয়োজনে এটি বাস্তবায়নে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাবে। সেই সঙ্গে বুয়েটের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী রাজনৈতিক দলভিত্তিক শিক্ষক রাজনীতি থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় আরও ঘোষণা করা হয়, ‘ইতোপূর্বে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দীর্ঘদিনের নির্লিপ্ততা, নিষ্ক্রিয়তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আবাসিক হলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উপাচার্যের ধারাবাহিক অবহেলা ও ব্যর্থতা আবরার ফাহাদের নির্মম হত্যাকাণ্ডে উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীদের সাহস জুগিয়েছে বলে সভা মনে করে। সভা সর্বসম্মতভাবে মনে করে, এসব ব্যর্থতার কারণে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম উপাচার্য পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। এ অবস্থায় অনতিবিলম্বে বুয়েটের উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করার জন্য সভা অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’

উল্লেখ্য, আবরার ফাহাদকে ৬ অক্টোবর রাতে তার রুম থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির মাঝখানের করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’

নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

এ হত্যার ঘটনায় ৭ অক্টোবর আবরারের বাবা বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১৩ জন নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া এই হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার দায়ে ছাত্রলীগ থেকেও স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ নেতাকে। 

আরও পড়ুন... 

আবরারের রুমমেট মিজান আটক

আবরার হত্যা মামলায় অমিত সাহা আটক

আবরার হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে মামলা

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যায় ৯ ছাত্রলীগ নেতা আটক 

ফোনে ডেকে নেওয়ার পর লাশ মিললো বুয়েট শিক্ষার্থীর