শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে ‘শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ: প্রতিবন্ধকতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক বৈঠকিতে এসব কথা বলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিকালে শুরু হয় বাংলা ট্রিবিউনের সাপ্তাহিক এই আয়োজন।
ছাত্র রাজনীতির সুস্থ চর্চা না থাকাটাই মূল সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হলো– এখন কি রাজনীতি আছে? ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে এটা শুনলে “আইরনিক্যাল” মনে হয়। এই ঘটনা ঘটছে তো ছাত্র রাজনীতি নেই বলেই। আমরা বলি, বিশ্ববিদ্যালয়ে সব রাজনৈতিক দলের সহাবস্থান করতে হবে। সেটা মুখের কথায় আছে, কাজের খাতায় নেই। যা হচ্ছে এটা রাজনীতিহীনতার জন্য হচ্ছে। তাই ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার কথা শুনলে মনে হয়, এর চেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল কথা আর হয় না। কারণ, ছাত্ররা রাজনীতি না করলে করবে কে? এখানে মুখ্য হচ্ছে অপরাধ, অপরাধী শিক্ষক হতে পারে ছাত্রও হতে পারে।’
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত হয়ে পড়ছেন, সেখানে যে আমরা সাধারণীকরণ করে কথা বলবো সেটাও ঠিক না। কারণ আজকে বলা হচ্ছে ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করে দিতে হবে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতিতে জড়িতদের একটি অংশ মনে করছে, সহিংসতা- সন্ত্রাস দিয়ে একটি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে পারবো। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না, কোনও মূল ধারার রাজনৈতিক দল “পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করতে” শেখাচ্ছে। মেধাবীদের যে আমরা খুনি বানাচ্ছি সেখানে একটা রাজনৈতিক প্রভাব আছে। এ অবস্থায় একটি সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আমাদের বাচ্চারা বড় হচ্ছে।’
শিক্ষাঙ্গনে সৃষ্ট বৈষম্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্যাটাগরি করা হয়েছে। এজন্য বিশেষ বিশেষ জায়গা বেষ্টনী দিয়ে আটকানো আছে। সেখানে মিটিং হয় না, মিছিল হয় না। সেখানে ল্যাবগুলো সংরক্ষিত। অন্যদিকে, সারাদিনের জন্য এমন কিছু জায়গা ফেলে রাখা হয় যেখানে মাইক বাজবে, ঢোল পেটাবে। ছাত্রাবাসগুলোও একই রকম। কোনও কোনও জায়গায় বিশেষ প্রটেকশন দেওয়া হয়। কারণ সে অতি মেধাবী, আবার কোনও কোনও জায়গায় প্রোটেকশন পায় না, কারণ মেধার ক্যাটাগরির মধ্যে সে পড়ে না। অন্য ধরনের বৈষম্যের মধ্যে ফেলা হয়।’
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকে আমাদের ব্যক্তিগত ইতিহাস বলতে চাই। আমরা সবাই আক্রান্ত হয়েছি, অস্বস্তির মধ্যে পড়েছি। চার বছরের কোর্স সাত বছরে করেছি। বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। দিনশেষে প্রশ্ন– আমি কেনো ওখানে একটি নিরাপদ পরিবেশ পাইনি? আমরা যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জেনারেলাইজড করি তখন আমাদের স্মরণ থাকে না যে এর মধ্যে অনেকগুলো স্তর আছে। সেই স্তরে যারা থাকেন, তাদের ঘাটতির জন্য, গাফিলতির জন্য দায়ভার নিতে হয় অন্যদের।’
শিক্ষাঙ্গনে প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাবের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লিডারশিপের চর্চা বিভিন্ন ক্লাবের মাধ্যমে হয়, খেলাধুলার মাধ্যমে হয়। আমি বাইরের দেশগুলোতে দেখেছি, এক্ষেত্রে অনেক সিস্টেমিক উৎসাহ দেওয়া হয়। যেমন– স্পোর্টস স্কলারশিপ, মিউজিক স্কলারশিপ থাকে। আমি দেখি যে, ১০ বছর আগে মানুষ যতটা সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় সম্পৃক্ত হতো, সেটি এখন প্রযুক্তির দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ করার বদলে প্রযুক্তি আমাদের আমাদের বিভক্ত করে দিচ্ছে।’
আবরার হত্যাক্ণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে সর্বস্তরের মানুষের কাছে এখন আলোচিত বিষয় আবরার হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের দায় আমরা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিছুদিন পর পর গণমাধ্যম কিংবা সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়।’