মঞ্জুকে গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে স্থানীয় লোকজন আনন্দ মিছিল করে। রাজধানী মার্কেট এলাকায় বিতরণ করা হয় মিষ্টি। এদিন দুপুর ১২টার দিকে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে বিতর্কিত এই কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩। চলমান ক্যাসিনোবিরোধী ও শুদ্ধি অভিযানের ধারাবাহিকতায় মঞ্জুকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা।
র্যাব-৩ অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুর বিরুদ্ধে অবৈধ দখলদারি, চাঁদাবাজি, মাদক কারবার ও জুয়ার আসর পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। আগে থেকেই তার বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজির মামলা ছিল। সর্বশেষ বুধবার রাতে রাজধানী মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন।’ মঞ্জুর কাছ থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র ও মাদক জব্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলর মঞ্জু সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি করতেন রাজধানী মার্কেটকে কেন্দ্র করে। ১ হাজার ৭৮৮টি দোকান থাকা এই মার্কেট পরিচালনা, জেনারেটর, এসি লাগানো, পানি ও বিদ্যুৎ বিলসহ নানা অজুহাতে মাসে কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলতেন তিনি। এই টাকার একটি অংশ মার্কেটের জন্য খরচ করলেও বাকি টাকা আত্মসাৎ করতেন। মার্কেট পরিচালনা কমিটির কেউ তার কাছ থেকে হিসাব চাওয়ার সাহস পেতেন না। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হতো।
র্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে কাজী রনি নামের রাজধানী মার্কেটের এক ব্যবসায়ী ওয়ারী থানায় কাউন্সিলর মঞ্জু ও তার ক্যাডার বাহিনীর ১২ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। মামলায় কাজী রনি অভিযোগ করেন, মার্কেটের ‘এ’ ব্লকের ১৩৩/১৩৪ নম্বর হোল্ডিংয়ে তার একটি দোকান রয়েছে। সম্প্রতি তিনি আগের ব্যবসা বাদ দিয়ে জুয়েলারি পণ্যের ব্যবসা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য দোকানের ডেকোরেশন পরিবর্তন শুরু করলে মঞ্জুর লোকজন তাকে ডেকে নিয়ে যায়। মার্কেট অফিসে মঞ্জু তাকে বলেন, ব্যবসা পরিবর্তন করতে হলে দুই লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। এই চাঁদা না দেওয়ায় তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওই ব্যবসায়ীর।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কাউন্সিলর মঞ্জুর ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে প্রদীপ তালুকদার, সায়েম, সাইদুল, ভুঁইয়া মিলন, আফজাল ওরফে বোর্ডিং আফজাল, আব্দুল হক, আওলাদ, এহসান, মোরশেদ, আরিফ, নাজমুল ও জাফর সানি উল্লেখযোগ্য। এই ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমেই তিনি রাজধানী মার্কেট নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতেন।
স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীরা জানান, নানা অজুহাতে মার্কেটের দোকান থেকে মাঝে-মধ্যেই টাকা তুলতেন মঞ্জু। মার্কেটে প্রায় ২ হাজার দোকান থাকায় অনেক টাকা উঠতো। এর থেকে সামান্য কিছু টাকা খরচ করে লোক দেখানো উন্নয়নের কাজ করা হতো। বাকি টাকা মঞ্জু ও তার ক্যাডার বাহিনী আত্মসাৎ করতো। এর আগে ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট প্রধান বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কিন্তু এতে কোনও কাজ হয়নি।
র্যাব সূত্র জানায়, মঞ্জুর পরিবারের সদস্যরা আমেরিকায় থাকে। অবৈধ দখলদারি ও চাঁদাবাজি থেকে পাওয়া টাকা হুন্ডির মাধ্যমে আমেরিকায় পাচার করতেন তিনি। তার বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র আইনের পাশাপাশি মানি লন্ডারিং আইনেও মামলা দায়ের করা হবে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার সম্পত্তির বিষয়ে জানার চেষ্টা চলছে।
র্যাব কর্মকর্তা সাফিউল্লাহ বুলবুল জানান, মঞ্জুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়াও চলছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ও মামলা নথিভুক্ত হলে আরও কিছু বিষয় জানা যাবে। এছাড়া রিমান্ডে এনেও জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার চাঁদাবাজি-দখলদারিত্বের অনেক কিছু বের হয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেন এই র্যাব কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন...
ডিএসসিসি’র কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু গ্রেফতার