গল্পে গল্পে ‘ভাঙা’ বাংলার বেদনা

271A5786কবি জীবনানন্দ দাশ তার ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের পাণ্ডুলিপির ওপরে লিখেছিলেন ‘বাংলার ত্রস্ত নীলিমা’। এই ত্রস্ত নীলিমার মাধ্যমেই বাংলা ভাঙার গল্প বলা হয়েছে। ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৯-এর প্রথম দিন বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ‘ভাঙা বাংলা: ত্রস্ত নিলীমায়’ সেশনে সেই ভাঙা বাংলার গল্পের বিশদ আলোচনা করলেন ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৯-এর প্রথম দিন বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ‘ভাঙা বাংলা: ত্রস্ত নিলীমায়’ সেশনে পশ্চিমবঙ্গের ঔপন্যাসিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী এবং বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ, গল্পকার, কবি ও গবেষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন লেখক ও শিক্ষক শামীম রেজা।
স্বপ্নময় চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হলেও তার পূর্বপুরুষ ছিলেন এপার বাংলার অর্থাৎ বাংলাদেশের নোয়াখালীর মানুষ। ১৯৯২ সালে স্বপ্নময় চক্রবর্তী ‘চতুষ্পাঠী’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন। এই উপন্যাসে স্বপ্নময় চক্রবর্তী দেখিয়েছেন, অচল পয়সার মতো ইংরেজি না জানা, আচার্যদেব ও তার পৌত্র, পিতৃহীন বিলুর চোখ দিয়ে ক্যালাইডোস্কোপের মতো উদ্ভাসিত ষাটের দশক। উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট দেশভাগ পরবর্তী মানুষদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা।
স্বপ্নময় চক্রবর্তীর কাছে সঞ্চালক শামীম রেজা জানতে চান, কীভাবে বেড়ে উঠেছেন তিনি? ভাঙা বাংলা নিয়ে তার ভাবনাই বা কী? এর উত্তরে স্বপ্নময় চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি জানতাম না, আমি ভাঙা বাংলায় জন্মেছি। পরে যখন ধীরে ধীরে দেশের বাড়ি, দেশের পুকুর, দেশের মানুষের কথা জানলাম, আমার ঠাকুরদাদা ও ঠাকুরমায়ের কাছে তাদের জন্মস্থান ও দেশের বাড়ি সম্পর্কে জানলাম, তখন বুঝতে পারি, আমাদের যে আত্মার বন্ধন ছিল, তা অনেক আগেই ছিন্ন হয়ে গেছে।’
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সৈয়দ মুজতবা আলীর কাছ থেকে প্রভাবিত হয়েই লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখি। আমি আমার মা-বাবার কাছ থেকেই দেশভাগের কথা জানতে পারি। তাদের চোখের মধ্যে দেখতে পারি দেশান্তরের বেদনা।’
স্বপ্নময় চক্রবর্তী তার উপন্যাস ‘চতুষ্পাঠী’ সম্পর্কে বলেন, ‘চতুষ্পাঠীর প্রেক্ষাপট দেশভাগ। পুরো ব্যাপারটা আমার স্মৃতি, আমার নির্মাণ। আবার ঠিক দেশভাগের ওপরও না, কিন্তু দেশভাগের বেদনা প্রকাশ পেয়েছে।’
স্বপ্নময় চক্রবর্তী বর্তমানে তার নতুন উপন্যাস নিয়ে কাজ করছেন। এই উপন্যাসে ’৪৭-এর দেশভাগ নিয়ে কথা না বলা হলেও ’৭১-এর ভয়াবহতা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। এক বিহারি মেয়ের গল্পের মধ্য দিয়ে তা উপস্থাপিত করা হয়েছে। নতুন এই উপন্যাসের নাম ‘জলের ওপর পানি’।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘প্রেম ও প্রার্থনার গল্প’ সম্পর্কে জানতে চান সঞ্চালক শামীম রেজা। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম তখন বলেন, ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এই উপমহাদেশে ব্যবসার ঘটনা ও তাদের শাসন নিয়ে এই গল্প। উত্তর-ঔপনিবেশিক নিয়ে পড়াশোনার সময় আমার এই বিষয়ে আগ্রহ জন্মায়। সময়টা পুরনো হলেও এই গল্পের প্রেক্ষাপট কিন্তু বাংলাদেশ। আমি মূলত দুটো সময় এক করার চেষ্টা করেছি।’
আলোচনার শেষ মুহূর্তে তরুণদের উদ্দেশে স্বপ্নময় চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি কোনও উপদেশ দিতে চাই না। তবে যত বেশি বই পড়বেন, তত বেশি জীবনটাও জানতে পারবেন।’