কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে এসেছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গত ৩০ ডিসেম্বর নির্যাতনের শিকার আলোচিত ওই গৃহবধূ, গণপরিবহনে নির্যাতনের পর নিহত রূপার ভাই, ঢাকার শ্বশুরবাড়িতে মৃত পিংকির পরিবার, সাতক্ষীরার মুক্তির ভাই ও দিনাজপুরের নিহত আঁখি মনির বাবা আসাদুজ্জামান।
সুবর্ণচরে গণধর্ষণের শিকার সেই গৃহবধূ বলেন, ‘মামলা করার পর আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আসামিরা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। আমার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে আসামিদের স্বজনরা। ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, কোনও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে না।’
কর্মসূচিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘১০ বছরের যৌন হয়ারনির পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে গা শিউরে উঠবে। গত ১০ মাসে পাঁচ হাজারের ওপর নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ পরিসংখ্যান শোনার পরও আমরা কেন প্রতিবাদী হয়ে উঠিনি! কারণ, আমাদের মানসিক অবস্থা এমন হয়েছে যে, বিচার চাইলেও পাবো না। আমরা বিভিন্ন সময় এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, বিভিন্ন জায়গায় কথা বলেছি, কিন্তু নির্যাতন বেড়েই চলেছে। এর প্রধান কারণ, আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছি। ঘটনা ঘটার পর দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী বললে বিচার হবে, না বললে হবে না। এ জন্য অনেক সময় বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে বলতে হয়—বিচার চাই।’
অনশনে ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি আকারে এটি পেশ করা হবে বলে জানান ‘আমরাই পারি’ পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের নির্বাহী সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক। তিনি স্মারকলিপি পড়েও শোনান। এতে বলা হয়, সম্প্রতি দেশে নারী ও শিশুর ওপর ধর্ষণ ও সব ধরনের যৌন সহিংসতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না প্রতিবন্ধী নারী, মেয়ে এমনকি ছেলে শিশুও। তারা ঘরে-বাইরে, রাস্তা-ঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে নিয়ত গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণচেষ্টাসহ নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে।
৯টি জাতীয় পত্রিকার খবরের বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১২শ’ ৫৩ জন নারী, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে দুইশ নারীকে, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন দুইশ’ ২১ জন, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার দুইশ’ ৫১ জন, ধর্ষণের পর হত্যা ৬২ জন, আত্মহত্যা করেছে ১০ জন, ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় হত্যার শিকার হয়েছেন তিন জন নারী ও দুইজন পুরুষ, ধর্ষণের শিকার সাতশ’ ৬৭ জন শিশু, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে একশ’ ৩৫ জন শিশুকে, যৌন সহিংসতার শিকার ৮০ মেয়ে ও ২৬টি ছেলে শিশু।