নারী অভিবাসন ও রেমিট্যান্স বাড়বে: রামরু

01বিগত বছরের তুলনায় এ বছর বিদেশে কর্মী যাওয়ার হার ১০ শতাংশ কমবে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)। তবে সংস্থাটি এও ধারণা করছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর রেমিট্যান্স ১৭ দশমিক ০৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি ২০১৯: সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছেন তারা। প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৬ লাখ ৪ হাজার ৬০ জন বাংলাদেশি কর্মী উপসাগরীয় ও অন্যান্য আরব দেশ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছে। এই ধারা ডিসেম্বর মাসে অব্যাহত থাকলে এ বছর অভিবাসনের প্রবাহ গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কমে যাবে।
২০১৮ সালে, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন কর্মী বাংলাদেশ থেকে কাজের উদ্দেশে বিদেশে অভিবাসন করেছে। ২০১৯ জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৯৭ হাজার ৪৩০ জন নারীকর্মী কাজের জন্য বিদেশ যায়। ডিসেম্বর মাসে নারী অভিবাসনের এই গতি অব্যাহত থাকলে ২০১৮ সালের তুলনায় এটি ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে যাবে।
রেমিট্যান্সের বিষয়ে প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ নভেম্বর পর্যন্ত অভিবাসী শ্রমিকরা ১৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৯ সালে রেমিট্যান্স হবে ১৮ দশমিক ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। গত বছরের তুলনায় রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৭ দশমিক ০৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। রেমিট্যান্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ৩২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। এ বছর নভেম্বর পর্যন্ত সর্বাধিক রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে যা মোট রেমিট্যান্সের ১৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
অভিবাসন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী প্রসঙ্গে রামরু’র প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৫৮ হাজার ২৮৩ জন নারীকর্মী সৌদি আরবে অভিবাসন করেছে। এ বছরে নিগ্রহের শিকার হয়ে বেশকিছু নারী শ্রমিক দেশে ফিরেছে। তবে এদের কোনও সঠিক পরিসংখ্যান এখনও জানা নেই।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ৯ হাজার ১৭৭ জন নারীকর্মীকে সৌদি আরবে বাংলাদেশের দূতাবাসের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়। এদের মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানো হয় ৮ হাজার ৬৩৭ জনকে। ২০১৯ সালের প্রথম ১০ মাসে রিয়াদে বাংলাদেশের দূতাবাসে ১ হাজার ২০৬ জন নারীকর্মীকে রাখা হয় যাদের মধ্যে ৯৩ জন অসুস্থ এবং ১৬ জন গর্ভবতী ছিল। আর প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের তথ্যমতে, এই বছরের অক্টোবর পর্যন্ত আনুমানিক ২১ হাজার শ্রমিক সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছে।
ভারতের এনআরসি ইস্যু বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য যেটি উদ্বেগের কারণ তা হলো, সে দেশ থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনকে আইনি প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠানোর একটি ক্ষেত্র এই আইনি পরিবর্তন তৈরি করে দিয়েছে। যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন যে এনআরসিকে কেন্দ্র করে কোনও ডিপোর্টেশন ঘটবে না কিন্তু বাস্তবতা হলো আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে বেশ কিছু মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত লোককে বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই পুশ-ইন করে পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি আসামসহ ভারতের অন্য স্থান থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকদের জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো আরও একটি মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের ব্যাপক কূটনৈতিক প্রস্তুতি প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যবহারিক কিংবা কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব কম দেওয়া হয়। অথচ উন্নত বিশ্বে ব্যবহারিক শিক্ষা প্রাথমিক অবস্থা থেকে দেওয়া হয়। দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকার বাড়ার অন্যতম কারণ এটি। বর্তমানে দেশের উচ্চ শিক্ষিতদের কাজের কোনও সুযোগ নেই। কারণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের সেভাবে প্রস্তুত করতে পারছে না।’

শাহদীন মালিক আরও বলেন, ‘চলতি বছরে আমাদের বৈদেশিক রেমিট্যান্স খুব বেশি হলে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কিছু বেশি হবে। এই পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাতে বাংলাদেশের এক কোটিরও বেশি লোক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। অন্যদিকে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত আমাদের দেশ থেকে গত পাঁচ বছর ধরে ৪-৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে। অথচ এদেশে ভারতের মাত্র দেড়-দুই লাখ মানুষ কাজ করে।’
শাহদীন মালিক বলেন, গত দুই বছরে আমি শরণার্থী খাতে যেসব সরকারি রাজনৈতিক বক্তব্য এসেছে, এই আইন সম্পর্কে কারও ধারণা না থাকলে, যে ন্যারেটিভটা হয়, আমাদের গত দুই বছরে সেই ন্যারেটিভ হয়েছে। মানবিকতার তাড়িত হয়ে আমরা তাদের দুয়ার খুলে দিয়েছি। ইটস টোটাল রাবিশ! আন্তর্জাতিক আইনে বাংলাদেশে কেউ যদি জীবন বাঁচানোর জন্য এসে হাজির হয়, আইন বলে এটা আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য তাকে আশ্রয় দেওয়া, আমরা সেই আইনের ন্যূনতম দায়িত্ব পালন করেছি। আন্তর্জাতিক এই আইন বিষয়ে আমরা কোনও আলোচনা না করে খালি বলছি মানবিক দিক! এখনও শরণার্থী বিষয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, একেবারে না জানলে, না বুঝলে একটা ইস্যু নিয়ে আমাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনা হয়। আমি বলছি না ভারতের এনআরসি ইস্যু নিয়ে আমাদের দুর্ভোগ দুর্দশা হবে। কিন্তু আসল কথা উড়িয়ে আমরা কেউ দিতে পারবো না। এজন্য সরকারের এই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।’